Page not found – সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জীবন https://bpbangla.com সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জীবন Tue, 26 Mar 2024 16:42:44 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.4.3 https://bpbangla.com/wp-content/uploads/2023/08/20230726_145843-60x60.png Page not found – সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জীবন https://bpbangla.com 32 32 কমিউনিকেশন সিস্টেমস ও নেটওয়ার্কিং | ২য় অধ্যায় | আইসিটি (ICT) | একাদশ-দ্বাদশ | এইসএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%b8-%e0%a6%93-%e0%a6%a8%e0%a7%87/ https://bpbangla.com/%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%b8-%e0%a6%93-%e0%a6%a8%e0%a7%87/#respond Tue, 26 Mar 2024 10:31:05 +0000 https://bpbangla.com/?p=971 কমিউনিকেশন

এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষে কোন মাধ্যম দ্বারা তথ্য প্রবাহের প্রক্রিয়া কে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বলে।

ডেটা

কম্পিউটার এ রক্ষিত কোন তথ্যের ইলেক্টিক্যাল রূপ কে ডেটা বলে।

ডেটা কমিউনিকেশন উপাদানসমূহ

ডেটা কমিউনিকেশন

ব্যান্ডউইডথ

একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন একটি চ্যানেল দিয়ে যে পরিমান ডেটা স্থানান্তরিত হয় তাকে ব্যান্ডউইডথ বলে।

প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ Bit স্থানান্তরিত হয় তাকে BPS বলে। (Bit Per Second) প্রতি সেকেন্ডে 10 mb পরিমাণ bit স্থানান্তরিত হলে তাকে 10 mbps বলে।

Communication বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে

1 Kilo bit = 1000 bit

1 Mega bit = 1000 kilo bit

Data Storage ক্ষেত্রে

1 Kilo byte = 1024 byte

1 Mega byte = 1024 kilo byte

ব্যান্ডউইডথ এর প্রকারভেদ

ন্যারোব্যান্ড

  • 45-300 bps
  • ব্যবহৃত হয় টেলিফোনেতে টেলিগ্রাফে

ভয়েসব্যান্ড

  • 9600 bps
  • টেলিফোন, printer, keyboard, ডেটা স্থানান্তর

ব্রডব্যান্ড

  • 1 mbps বা তার বেশী
  • 1. অপটিক্যাল ফাইবারে, 2. মাইক্রোওয়েভ, 3. স্যাটেলাইট

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড

যে পদ্ধতিতে একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডেটা স্থানান্তর করা হয় তাকে ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বলে।

সিরিয়াল ট্রান্সমিশন

যে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে বিটগুলো একসাথে স্থানান্তরিত না হয়ে ধারাবাহিকভাবে স্থানান্তরিত হয় তাকে বলা হয় সিরিয়াল ট্রান্সমিশন।

সিনক্রোনাস

যে ডেটা ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় প্রেরক স্টেশনের ডেটার ক্যারেক্টার সমূহকে ব্লক আকারে ভাগ করে প্রতিবার একটি করে ব্লক সমান বিরতি নিয়ে ট্রান্সমিট করা হয় তাকে সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে।

এসিনক্রোনাস

যে পদ্ধতিতে প্রেরক কম্পিউটার হতে প্রাপক কম্পিউটারের ডেটা ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হয় এবং ট্রান্সমিটের মধ্যে সময়ের ব্যবধান সমান না হয় তাকে এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে।

সিনক্রোনাস

যে ডেটা ট্রান্সমিশন ব্যবস্থায় প্রেরক স্টেশনের ডেটার ক্যারেক্টার সমূহকে ব্লক আকারে ভাগ করে প্রতিবার একটি করে ব্লক সমান বিরতি নিয়ে ট্রান্সমিট করা হয় তাকে সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে।

এসিনক্রোনাস

যে পদ্ধতিতে প্রেরক কম্পিউটার হতে প্রাপক কম্পিউটারের ডেটা ক্যারেক্টার বাই ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হয় এবং ট্রান্সমিটের মধ্যে সময়ের ব্যবধান সমান না হয় তাকে এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন বলে।

সুবিধাসমূহ

  • প্রেরক যে কোন সময় ডেটা স্থানান্তর করতে পারেন এবং গ্রাহক তা গ্রহণ করতে পারেন।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য প্রেরকের কোন প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।
  • এটির ইন্সটলেশন ব্যয় অত্যন্ত কম।
  • অল্প করে ডেটার ট্রান্সমিশন প্রয়োজন এমন পরিবেশে, যেমন ইন্টারনেটে এই পদ্ধতি বেশি উপযোগী।

অসুবিধাসমূহ

  • যখন ডেটা স্থানান্তরের কাজ বন্ধ থাকে তখন ট্রান্সমিশন মাধ্যমটি অকারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে যা মাইক্রোওয়েভ বা স্যাটেলাইট মাধ্যমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  • সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের তুলনায় এর দক্ষতা কম।
  • ডেটা ট্রান্সমিশনে গতি অপেক্ষাকৃত মন্থর।

ব্যবহার

  • কোন কম্পিউটার হতে প্রিন্টারে
  • পাঞ্চ কার্ড রিডার হতে কম্পিউটারে
  • কম্পিউটার হতে কার্ড পাঞ্চারে
  • কী-বোর্ড হতে কম্পিউটারে ডেটা স্থানান্তরে

সিরিয়াল ট্রান্সমিশন

যে ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে বিটগুলো একসাথে স্থানান্তরিত না হয়ে ধারাবাহিকভাবে স্থানান্তরিত হয় তাকে বলা হয় সিরিয়াল ট্রান্সমিশন।

আইসোক্রোনাস আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন মেথড হলো সিনক্রোনাস ও অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন পদ্ধতির একটি সমন্বিত রূপ

এসিনক্রোনাস vs সিনক্রোনাস

এসিনক্রোনাসসিনক্রোনাস
এ পদ্ধতিতে প্রেরক কম্পিউটার হতে ডেটা গ্রাহক কম্পিউটারে ক্যারেক্টার-ব্যই-ক্যারেক্টার ট্রান্সমিট হয়।এ পদ্ধতিতে প্রথমে প্রেরক স্টেশনের প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাই ডেটাকে সংরক্ষণ করা হয় এবং অতঃপর ডেটার ক্যারেক্টারসমূহকে ব্লক আকারে ভাগ করে প্রতিবারে একটি করে ব্লক ট্রান্সমিট করা হয়।
এতে অতিরিক্ত বিট ব্যবহার করা হয় বলে এই ট্রান্সমিশনের দক্ষতা কম।এর দক্ষতা অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের চেয়ে বেশি।
এতে ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি কম।ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি অনেক দ্রুত হয়।
প্রেরকের কোন প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয় না।প্রেরক স্টেশনে প্রেরকের সাথে একটি প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হয়।
ইন্সটলেশন খরচ অত্যন্ত কম।এটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল।
এ পদ্ধতিতে ট্রান্সমিট সময় বেশি লাগে।এ পদ্ধতিতে ট্রান্সমিট সময় কম লাগে।

ডেটা ট্রান্সমিশন মোড

উৎস থেকে গন্তব্যে ডেটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ডেটা প্রবাহের দিককে ডেটা ট্রান্সমিশন মোড বলা হয়।

সিমপ্লেক্স

সিমপ্লেক্স ডেটা ট্রান্সিমিশন মোডে কেবলমাত্র একদিকে ডেটা প্রেরণের ব্যবস্থা থাকে।

ব্যবহার: রেডিও, টিভি, PABX সিস্টেম।

হাফ ডুপ্লেক্স

হাফ ডুপ্লেক্স ডেটা ট্রান্সমিশন মোডে উভয় দিক থেকে ডেটা প্রেরণের সুযোগ থাকে তবে তা একই সময়ে যুগপৎ সম্ভব নয়।

ফুল ডুপ্লেক্স

ফুল ডুপ্লেক্স ডেটা ট্রান্সমিশন মোডে একই সময়ে উভয় দিক হতে ডেটা প্রেরণের ব্যবস্থা থাকে।

ডেটা ট্রান্সমিশন মোড

প্রাপকের সংখ্যা ও ডেটা গ্রহণের অধিকারের উপর ভিত্তি করে ডেটা ট্রান্সমিশন মোড ৩ প্রকারঃ

ইউনিকাস্ট

ইউনিকাস্টে একটি প্রেরক ও একটি প্রাপক হয়।

ব্রডকাস্ট

ব্রডকাস্ট মোডে নেটওয়ার্কের কোনো একটি নোড (কম্পিউটার, প্রিন্টার বা অন্যকোনো যন্ত্রপাতি) থেকে ডেটা প্রেরণ করলে তা নেটওয়ার্কের অবিন্যস্ত সকল নোডই গ্রহণ করে।

মাল্টিকাস্ট

মাল্টিকাস্ট মোডে নেটওয়ার্কের কোনো একটি নোড থেকে ডেটা প্রেরণ করলে তা নেটওয়ার্কের অধীনস্ত সকল নোডই গ্রহণ করতে পারে না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি কোডের সকল সদস্য গ্রহণ করতে পারে।

ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম

তার মাধ্যম

  • কো এক্সিয়াল ক্যাবল
  • টুইস্টেড ক্যাবল
  • অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল

তারবিহীন মাধ্যম

  • রেডিও তরঙ্গ
  • মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ
  • ইনফ্রারেড
  • ব্লু-টুথ
  • ওয়াই-ফাই
  • ওয়াই-ম্যাক্স

তার মাধ্যম

কো এক্সিয়াল ক্যাবল

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল

  • ৪ জোড়া তার

UTP – (Unshielded Twisted Pair)

USTP – (Shielded Twisted Pair)

কো এক্সিয়াল ক্যাবলের কানেক্টর BNC,RF

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের কানেক্টর RJ45, RJII

ফাইবার অপটিক ক্যাবল

  • আলোর গতিতে তথ্য স্থানান্তর করা হয় [3×108m/s]
  • এটি হলো অত্যন্ত ছোট কাঁচ তন্তু
  • চৌম্বকপ্রভাব মুক্ত ক্যাবল [সিলেট বোর্ড]
  • নন ম্যাটালিক ক্যাবল
  • মাল্টি কম্পোট্যান্ট কাঁচ দিয়ে তৈরি [বরিশাল বোর্ড]

ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল কীভাবে ডাটা পরিবহন করে?

Wireless Communication Medium

কোনো প্রকার তার ছাড়া যদি তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদানকেই Wireless Communication Medium বলে কম্পাঙ্কের উপর ভিত্তি করে এই মাধ্যমকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

রেডিও ওয়েভ

  • 3 khz – 300 GHz এর মধ্যে যদি ডেটা আদান প্রদান করা হয় তাকে রেডিও ওয়েভ বলে।

কাজ:

  • বেতার তরঙ্গ
  • মোবাইল যোগাযোগ
  • কম্পিউটার যোগাযোগ
  • কৃত্রিম উপযোগে যোগাযোগ
  • যেকোনো বাঁধায় (পাহাড়/পর্বত) থেমে যায় না। অতিক্রম করতে পারে।

মাইক্রোওয়েভ

  • 300 MHz থেকে 300 GHz যদি ডেটা আদান প্রদান করা হয়

কাজ:

  • দূরপাল্লা যোগাযোগ
  • স্যাটেলাইট

মাইক্রোওয়েভকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে

  • টেরিস্টোরিয়াল মাইক্রোওয়েভ [কম দূরত্বে কারণ বাঁধা অতিক্রম করতে পারে না]
  • স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ

ইনফ্রারেড

  • 300 GHz – 430 THz
  • কাছাকাছি দূরত্বের ক্ষেত্রে
  • এই মাধ্যমে দুই প্রান্তে থাকে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার
  • দেয়াল অতিক্রমে ব্যর্থ

কাজ:

  • সকল রিমোট কন্ট্রোলের জিনিসে
তারমাধ্যমতারবিহীন মাধ্যম
উচ্চগতি সম্পন্নতুলনামূলক গতি কম
ব্যান্ডউইথ উচ্চব্যান্ডউইথ নিম্ন
খরচ কমখরচ বেশী
কপার ফার, ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইত্যাদি দিয়ে ডেটা ট্রান্সমিট হয়।ইলেট্রমেগনেটিক ওয়েড, ম্যাগনেটিক ওয়েড, ইনফ্রারেড দিয়ে ডেটা স্থানান্তর করা হয়।
LAN ও MAN এ ব্যবহৃতWLAN, Bluetooth ইত্যাদি
Data loss প্রায় শূণ্যData loss এর সুযোগ থাকে
Service quality always bestAlways not good

Hotspot

হটসপট হলো একধরণের ওয়ারলেস ইন্টারনেট এক্সেস পয়েন্ট যা বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়।

Bluetooth

  • স্বল্প দূরত্বে বিনা খরচে ডেটা আদানপ্রদানের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাকে Bluetooth বলে।
  • 10 মিটার এর মধ্যে
  • Bluetooth WPAN (Wireless Personal Area Network) তৈরিতে সাহায্য করে
  • ব্লুটুথের প্রযুক্তিগত নাম হচ্ছে IEEE 802.15
  • Bluetooth প্রযুক্তির মাধ্যমে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকে পিকোনেট বলে। [মোট ২৫৫ টি স্লেভনোট থাকে, ৪ টি কার্যকর বাকিগুলো নিষ্ক্রিয়।]
  • ব্লুটুথের ব্যক্তিগত ব্যান্ডউইথ 1 mbps.
  • IEEE = Institute of Electrical & Electronic Engineering

সুবিধা/বৈশিষ্ট্য

  • কাছাকাছি দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।
  • ২.৪ গিগাহার্টস ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগন্যাল আদান-প্রদান করে। এর ব্যান্ডউইথ ১ Mbps.
  • ১০-১০০ মিটারের মধ্যে তারবিহীন ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে এবং ডেটা ট্রান্সমিশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।
  • ব্লুটুথ হলো মাস্টার-স্লেভ কাঠামোসহ একটি প্যাকেট-ভিত্তিক প্রটোকল।
  • মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ভিডিও গেম কনসোলগুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করতে এবং তথ্য বিনিময় করতে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।
  • একটি পিকোনেটে মোট ২৫৫টি স্লেভ নোডগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। নোড থাকে, তবে আটটি স্লেভের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং অবশিষ্ট।
  • ব্লুটুথ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনফিগার করতে পারে।

অসুবিধা

  • ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে যোগাযোগ করা যায় না।
  • ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলকভাবে কম।
  • মোবাইল ফোনের ব্লটুথ অপশনটি অন করা থাকলে ব্যাটারির চার্জ খরচ হতে থাকে।
  • ব্লুটুথ ইন্টারনেট গতি অনেক কম।
  • ব্লটুথ-এর মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সফারে সিকিউরিটি কম।

Wifi

  • Wireless Fidelity
  • WPAN(Wireless Personal Area Network) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • প্রযুক্তিগত নাম হচ্ছে IEEE 802.11
  • যতোটুকু পর্যন্ত ওয়াইফাই কার্যকর তাকে ওয়াইফাই জোন বলে।

বৈশিষ্ট্য/সুবিধা

  • ওয়াই-ফাই এর কভারেজ সীমিত পরিসর থেকে নিয়ে বিস্তৃত পরিসরেও পাওয়া সম্ভব।
  • এর ব্যান্ডউইথ 10 Mbps-50Mbps.
  • ওয়াই-ফাই LAN-এর চেয়ে সস্তা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকে।
  • যে কোনো মানের Wi-Fi বিশ্বের যে কোনো জায়গায় কাজ করবে।
  • Wi-Fi LAN এর সাথে সংযুক্ত হবার কম্পিউটারকে একটি ওয়‍্যারলেস নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কন্ট্রোলার সংবলিত হতে হয়।
  • রাউটারের সাথে একটি ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন মডেম এবং একটি ওয়াই-ফাই এর আওতার মধ্যে থাকা সকল ডিভাইসগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাকসেস সুবিধা পায়।
  • Wi-Fi এবং WiBro (Wireless Broadband) একটি পোর্টেবল ওয়াই-ফাই রাউটার-এর মাধ্যমে খুব সহজেই নিজস্ব ওয়াই-ফাই হটস্পট তৈরি করে যেটি সেলুলার নেটওয়ার্কের অ্যাকসেস পয়েন্টকে যুক্ত করায় এরমাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়।

অসুবিধা

  • ডেটা স্থানান্তর বেশ ধীরগতিসম্পন্ন।
  • নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া কভারেজ পাওয়া কঠিন।
  • নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে।

Wimax

  • Wireless Interoperability for Microwave access
  • প্রযুক্তিগত নাম IEEE 802.16
  • 30-75 Mbps
  • এটিকে ফাইবার অপটিক্যালের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

সুবিধা

  • একক একটি বেজ স্টেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট সেবা দেয়া।
  • তারবিহীন উপায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অ্যাকসেস করা যায়।
  • এই নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন অনেক দ্রুতসময়ে করা সম্ভব।
  • প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেবা পাওয়া যায়।
  • ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে ওয়াই-ফাই হটস্পটে ইন্টারনেট সেবা দেয়া যায়।
  • তথ্য ও টেলিযোগাযোগ সেবাগুলো (VOIP, IPTV) প্রদান করা যায়।
  • নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা প্রদান করা যায়।
  • বহনযোগ্য সংযোগ প্রদান করা যায়।
  • অন্যান্য নেটওয়ার্কের তুলনায় খরচ কম।

অসুবিধা

  • ওয়ারের অধীনে অনেক ব্যবহারকারী একই সময়ে ইন্টারনেট অ্যাকসেসের চেষ্টা করলে মারাত্মক ট্রাফিকের সমস্যাদেখা দেয় এবং ব্যান্ডউইথ কমে যায়
  • অধিক দূরত্বে সংযোগের জন্য লাইন-অফ-সাইট এর প্রয়োজন হয়।
  • খারাপ আবহাওয়া যেমন ঝড় বৃষ্টির কারণে এর সিগন্যালে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
  • অন্যান্য ওয়‍্যারলেস যন্ত্রপাতিতে বাধার সৃষ্টি।
  • বেশি বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হয়।
  • বাস্তবায়ন ও পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

সেল সিগন্যাল এনকোডিং (Cell Signal Encoding)

মোবাইলে বিভিন্ন ট্রান্সমিটার থেকে প্রেরিত সিগন্যালগুলোকে এনকোডিং করার জন্য যে এনকোডিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তাকে সেল সিগন্যাল এনকোডিং বলে। সেল এনকোডিং এর জন্য FDMA, GSM, CDMA প্রভৃতি প্রযুক্তির উন্নয়ন করা হয়েছে। FDMA হলো ফ্রকোয়েন্সি ডিভিশন মাল্টিপল একসেস সেল এনকোডিং সিস্টেম যা ১ম প্রজন্মের মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হতো। এতে প্রত্যেক সেলে ব্যবহৃত ট্রান্সমিটিং ও রিসিভিং ফ্রিকোয়েন্সি, প্রতিবেশী সেলে ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি থেকে আলাদা হয়ে থাকে।

FDMA – frequency division multiple access

TDMA – time division multiple access

CDMA – Code-Division Multiple Access

Roaming

Coverage area এর বাইরে গিয়েও অনবরত ডেটা ব্যাবহার করা কে রোমিং বলে।

GSM

  • Global System for Mobile Communication
  • GSM ব্যাবহৃত হয় মোবাইল সিম ব্যাবহার এর ক্ষেত্রে
  • এর ধারণা টি আসে 2G থেকে।

Computer Networking

পরস্পর ডেটা আদানপ্রদানের লক্ষ্যে একাধিক কম্পিউটার কোনো যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা একসঙ্গে যুক্ত করা হলে তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং

Example

উদ্দেশ্য

  • তথ্য বিনিময়
  • হার্ডওয়‍্যার রিসোর্স শেয়ার
  • সফটওয়‍্যার রিসোর্স শেয়ার

সুবিধা

  • অফিস অটোমেশন

নেটওয়ার্কিং এর ডিভাইসগুলো

নেটওয়ার্কিং এর মৌলিক উপাদান

Hub

  • বোকা ডিভাইস
  • LAN এর সেগমেন্ট কানেক্ট করতে হাব ব্যাবহৃত
  • Star টপোলজি এর ক্ষেত্রে হাব একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস

Switch

  • বুদ্ধিমান ডিভাইস
  • এর মাধ্যমে প্রেরক থেকে প্রাপকে তথ্য সরাসরি পাঠানো সম্ভব।

Router

  • এর প্রধান কাজ ডেটা সাপ্লাই করা
  • প্রটোকল ছাড়া যুক্ত হতে পারেনা

গেটওয়ে

  • একটি নেটওয়ার্ক কে আরেকটি নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত করে

রিপিটার

  • রিপিটারের কাজ হচ্ছে সিগনাল কে পুনর্বর্ধিত করে আগের শক্তি ফিরিয়ে দেয়া।

ব্রিজ

  • একাধিক LAN কে সংযোগ করে।

নেটওয়ার্ক টপোলজি

একটি নেটওয়ার্কের ফিজিকাল ডিভাইস বা কম্পোনেন্ট যেমন: পিসি, কেবল, রাউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি যেভাবে নেটওয়ার্কে পরস্পর সংযুক্ত থাকে তাকে টপোলজি বলে।

Bus Topology

  • যেকোনো একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেলে Bus Topology তে কোনো সমস্যা হবে না।
  • নতুন কোনো ডিভাইস বা কম্পিউটার সংযুক্ত করলে কোনো অসুবিধা হবেনা এতে ব্যাবহার করা হয়- স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, কম্পিউটার ল্যাব, ইত্যাদি।

Ring Topology

  • মেইন লাইন এর প্রয়োজন নেই।
  • প্রতিটি লাইনের দূরত্ব সমান।
  • একটি কম্পিউটার নষ্ট হলে বাকি কম্পিউটার এর কাজ করতে পারে না পুরো সিস্টেম অচল হয়ে পরে।
  • নতুন একটি ডিভাইস সংযুক্ত করলেও সিস্টেম কিছু সময়ের জন্য অচল হয়ে যায়।

Star Topology

  • যে টপোলজি তে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য কম্পিউটার সংযুক্ত হয়ে টপোলজি গঠন করে তাকে স্টার টপোলজি বলে।
  • এখানে সবগুলো কম্পিউটার হাবের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
  • একটি কম্পিউটার নষ্ট হলে বা নতুন কোনো একটি যুক্ত করলে টপোলজি তে কোনো সমস্যা হয় না।
  • কিন্তু মেইন কম্পিউটার বা হাব নষ্ট হলেই পুরো সিস্টেম অচল হয়ে পড়বে।

Tree Topology

  • যে টপোলজি তে কম্পিউটারগুলো একে অপরের সাথে গাছের শাখা প্রশাখার মত যুক্ত থাকে তাকে ট্রি টপোলজি বলে।

Mesh Topology

  • এই টপোলজি তে প্রতিটি কম্পিউটার একটি অপরটির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে।
  • এতে করে মেশ টপোলজি “সর্বোচ্চ গতি” পাওয়া যায়।

Hybrid Topology

  • কয়েকটি টপোলজি একসাথে হয়ে যে টপোলজি হয় তাকে হাইব্রিড টপোলজি বলে।

Exercise

ক্লাউড কম্পিউটিং

কমপিউটার ও ডেটা স্টোরেজ সহজে ক্রেতার সুবিধা মত চাহিদা মত ভাড়া দেয়ার সিস্টেমকে ক্লাউড কম্পিউটিং বলে।

বৈশিষ্ট্য

  • রিসোর্স স্কেলেবিলিটি (যত চাবো তত পাবো)
  • অন ডিমান্ড সেবা (যখন চাবো তখন পাবো)
  • Pay as you go (যতটুকু ব্যাবহার ততটুকু টাকা)

ক্লাউড কি সেবা দিচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটার তিন প্রকারঃ

কাজ

  • খরচ কমে।
  • যত স্টোরেজ চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়।
  • সহজ প্রাপ্যতা রয়েছে।
  • নিজে নিজেই আপডেট হয়।
  • খুব সহজেই পরিবর্তন করা যায়।

অসুবিধা

  • সম্পূর্ণ নিজের নয় বলে নিরাপত্তা সমস্যা।
  • সার্ভার ডাউন সমস্যা।
  • ইন্টারনেট নির্ভর হতে হয়।
  • ধীর গতি।
]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%ae%e0%a6%b8-%e0%a6%93-%e0%a6%a8%e0%a7%87/feed/ 0
বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত | ১ম অধ্যায় | আইসিটি (ICT) | একাদশ-দ্বাদশ | এইসএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7/ https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7/#respond Mon, 25 Mar 2024 04:21:56 +0000 https://bpbangla.com/?p=910 তথ্য ও উপাত্ত

উপাত্ত


Data

ㅤসায়েম

ㅤㅤㅤㅤㅤㅤপারে

ㅤকিছুই

ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤনা

১. উপাত্ত অগোছালো

২. প্রক্রিয়াকরণের পূর্বের অবস্থা

৩. সকল তথ্যই উপাত্ত

তথ্য


Information

সায়েম কিছুই পারে না

১. তথ্য সুবিন্যস্ত

২. প্রক্রিয়াকরণের পরের অবস্থা

৩. সকল উপাত্ত তথ্য নয়

বিশ্বগ্রাম

মার্শাল ম্যাকলুহান

“গ্লোবাল ভিলেজ হচ্ছে এমন একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা যেখানে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর সকল একটি সমাজে বসবাস করে এবং একে অপরের তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে থাকে।”

বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ

বিশ্বগ্রাম ধারণা সম্পর্কিত প্রধান উপাদানসমূহ

  • যোগাযোগ
  • কর্মসংস্থান
  • শিক্ষা
  • চিকিৎসা সেবা
  • গবেষণা
  • অফিস
  • বাসস্থান
  • ব্যবসায়-বাণিজ্য
  • সংবাদ
  • বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ (Communication)
  • সাংস্কৃতিক বিনিময়যোগাযোগ

ইন্টারনেট

ARPANET

Advance Research Project Agency network

[Text]

E-mail

Electronic Mail

[Text]

টেলিকনফারেন্সিং

মোবাইলের মাধ্যমে কনফারেন্স করা

টেলিমেডিসিন

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে কোনো ভোগৌলিক দূরত্বে অবস্থানরত রোগীকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করাকে টেলিমেডিসিন বলে।

GPS

Global Positioning System

আউটসোর্সিং

অনলাইনে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোনো কাজ খুঁজে নেওয়া এবং সেটি সম্পাদন করার পর মালিকের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে যে উন্মুক্ত পেশার সৃষ্টি হয়, তাকে আউটসোর্সিং বলে।

ফ্রিলেন্সিং

নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করাকে ফ্রিলেন্সিং বলে।

Virtual Reality

প্রকৃতপক্ষে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞানজনিত কল্পনাকে Virtual Reality বলে।

Virtual Reality প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিমুলেশন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে।

Virtual Reality Software list:

Virtual Reality তে ত্রিমাতৃক ইমেজ তৈরি করা হয়। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারী ওই পরিবেশে মগ্ন হতে, বাস্তবের অনুকরণে সৃষ্ট দৃশ্য উপভোগ করতে, সেই সাথে বাস্তবের ন্যায় শ্রবণাভূতি এবং দৈহিক ও মানসিক ভাষাবেগ, উত্তেজনার অনুভূতি প্রভৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

বিভিন্ন ধরণের Sensor, বিভিন্ন ধরণের সিমুলেশন, মডেলিং ও গ্রাফিক্স সফটওয়‍্যার।

সুবিধাঅসুবিধা
চিকিৎসাব্যয়বহুল
গাড়ি চালানোকল্পনার জগৎে বিচরণ
বিমান চালনাস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ট্রাফিক পরিচালনামনুষ্যত্বহীনতা
মহাকাশ যাত্রা
বিনোদন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence): Al

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের চিন্তাভাবনাগুলো কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটার অথবা কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রের মধ্যে রূপ দেয়ার ব্যবস্থা।

MIT এর John Mc Carthy সর্বপ্রথম AI শব্দটি ব্যবহার করেন।

জনক হলো বিজ্ঞানী “অ্যালান টুরিং”

টুরিং টেস্ট

এটি হচ্ছে এমন একটি পরীক্ষা যার সাহায্যে কোনো যন্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে কীনা তা পরীক্ষা করা যায়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রয়োজন প্রোগ্রামিং, ভাষা LISP, PROLOG, C/C++, CLISP, JAVA ইত্যাদি প্রয়োগ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হয়।

এক্সপার্ট সিস্টেমের সুবিধা

  • অনবরত কাজ করতে পারে
  • এক্সপার্টের প্রতি নির্ভরশীলতা কমে
  • মানুষের মতো কখনোই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ভুলে যায় না

এক্সপার্ট সিস্টেমের অসুবিধা

  • বেকারত্ব সৃষ্টি
  • System Error
  • ভুল সিদ্ধান্ত

Al এর ব্যবহার

Robotics

রোবোটিক্স হলো প্রযুক্তির একটি ব্যাখ্যা যেটি রোবটসমূহের ডিজাইন, নির্মাণ, কার্যক্রম ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে।

Robot

রোবট হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বা যন্ত্র মানব যা মানুষের অনেক দুঃসাধ্য ও কঠিন কাজ স্বয়ংক্রিয় ভাবে করতে পারে।

রোবটের বিভিন্ন উপাদান

  • Moveable Body
  • Actuator

একটুয়েটর হলো এমন একধরণের মটর যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘোরানো বা যান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোবোটের কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করে। রোবটের হাত পা এর পেশি হিসাবে অভিহিত।

  • Power System

রিচার্জেবল লেড এসিড ব্যাটারি

  • Electric Circuit
  • প্রোগ্রামকৃত মস্তিষ্ক বা কম্পিউটার
  • অনুভূতি বা sensing
  • Manipulation

রোবট হাত পা এর সাহায্যে এর আশেপাশের বস্তুগুলোর অবস্থার পরিবর্তন বা বস্তুটি পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে ম্যানিপুলেশন বলে।

Robotics এর ব্যবহার

ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)

  • ক্রায়সার্জারি হলো এমন একটি চিকিৎসাপদ্ধতি যার মাধ্যমে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক বা রোগাক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়।
  • সর্বপ্রথম ক্রায়োসার্জারিতে CO₂ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
  • এ পদ্ধতিতে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় আনতে যে সকল পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাকে ক্রায়োসার্জারি এজেন্ট বলে। যেমন: নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন গ্যাস তরল N₂, তরল O2 etc.

CryosurgeryTemperature

তরল Ne-196 ডিগ্রী সেলসিয়াস
ডাইমিথাইল ইথার প্রোপেন-41 ডিগ্রী সেলসিয়াস
নাইট্রাস অক্সাইড-89 ডিগ্রি সেলসিয়াস
তরল অক্সিজেন-182.9 ডিগ্রী সেলসিয়াস
কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড-79 ডিগ্রী সেলসিয়াস

ক্রায়োসার্জারি সুবিধা

  • সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির মতো কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন নেই
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
  • ক্যান্সার ও টিউমারের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে
  • হাসপাতালে খুব কম সময় অবস্থান করতে হয়
  • খরচ কম

ক্রায়োসার্জারি অসুবিধা

  • সব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায় না
  • দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়

মহাকাশ

20 July 1969 সর্বপ্রথম চাঁদে যায়

2 December 1971 মার্স-ও-সর্বপ্রথম মঙ্গলগ্রহে অবতরণ

মহাকাশ অভিজান করার জন্য মহাকাশযানের বেগ 3000 মিটার/ঘন্টা অর্জন করতে হয়।

জিওস্ট্যাশনারি স্যাটেলাইট (ভুস্থির উপগ্রহ)

যেসব স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট অরবিটে পৃথিবীর বেগের সাথে সমান বেগে ও দিকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাকে জিওস্ট্যাশনারি স্যাটেলাইট বলে

  • পৃথিবী থেকে এদের স্থির মনে হয়।
  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে ৫৭ তম দেশ হিসেবে জিওস্ট্যাশনারি স্যাটেলাইট তৈরি করে।
  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট একটি জিওস্ট্যাশনারি স্যাটেলাইট।
  • PLC – Program Logic Controller
  • CAD – Computer Aided Design
  • Drone/UVA – Unmanned Aerial Vehicle

বায়োমেট্রিক

মানুষের দৈহিক গঠন বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য পরিমাপের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে বায়োমেট্রিক বলে।

বায়োমেট্রিক শারীরবৃত্তিয়

বায়োমেট্রিক আচরণগত

Fingerprint best

  • সহজলভ্য
  • সহজে ব্যবহারযোগ্য
  • সময় খুব কম লাগে
  • দ্রুত ফলাফল
  • একটি অফিস বা স্কুলের জন্য একটি মেশিনই যথেষ্ট

বায়োইনফরমেটিক্স

জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলো যখন কম্পিউটার প্রযুক্তিকৌশল ব্যববার করে সমাধান করা যায় তখন তাকে বায়োইনফরমেটিক্স বলে।

একটি বায়োইনফরমেটিক্স ডিভাইস সাধারণত ৩ টি কার্য সম্পাদন করে থাকে।

যেমন:

  • ডিএনএ ক্রম থেকে প্রোটিন সিকুয়েন্স নির্ণয়
  • প্রোটিন সিকুয়েন্স থেকে প্রোটিন স্ট্রাকচার নির্ণয় করে
  • প্রোটিন স্ট্রাকচার থেকে প্রোটিনের কাজ নির্ণয় করে

বায়োইনফরমেটিক্স Softwares

Genetic Engineering

কোনো জীব থেকে একটি নির্দিষ্ট জিন বহনকারী ডিএনএ পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবে স্থানান্তরের কৌশলকে জ্যানেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে।

Genetic Engineering এর ব্যাবহার

Nanotechnology

ন্যানোটেকনোলজি হলো পারমানবিক বা আনবিক স্কেলে অনেক ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব ও বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান।

1 nano=10^-9

1nm=10^-9 m

প্রথম ধারণা দেন Richard Feynman

Nanotechnology এর ব্যবহার

  • খাবারের স্বাদ নিয়ন্ত্রণ
  • খাদ্য প্যাকেজিং
  • ন্যানো স্যান্সর বা ছোট রোবট
  • ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি
  • জ্বালানী – ফুয়েল সেল তৈরি
  • ঔষুধ তৈরি
  • বস্ত্র শিল্প
  • মহাকাশ অভিযান
  • খেলাধুলার সামগ্রী
  • ক্যান্সার নির্ণয় ও নিরাময়

Nanotechnology এর অসুবিধা

ব্যয়বহুল, অনেক গবেষণায় প্রয়োজন, বেকারত্ব সৃষ্টি হবে, প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার অনেক ক্ষতি করে। ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপি রেকর্ডিং ডিভাইস তৈরি করা যাবে যা সাধারণ চোখে দেখা যাবে না। এতে মানুষের গোপনীয়তা নষ্ট হবে। মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি সম্ভব।

Smart Drug

ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরিকৃত ঔষুধকে স্মার্ট ড্রাগ করা হয়।

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা

Hacking

প্রোগ্রাম রচনা ও প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কের ক্ষতি করাকে হ্যাকিং বলে।

  1. হোয়াইট হ্যাকার
  2. গ্রে হ্যাট হ্যাকার
  3. ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার

প্লেজিয়ারিজম

তথ্য সূত্র উল্লেখব্যাতিত কোনো ছবি, অডিও ভিডিওসহ যেকোনো তথ্য ব্যবহার করা একটি অপরাধ যাকে প্লেজিয়ারিজম বলে।

Expert System

এক্সপার্ট সিস্টেম হলো একধরণের সিদ্ধান্ত সমর্থন পদ্ধতি যা নির্দিষ্ট বিষয়ে মানুষের ন্যায় কৃত্রিম দক্ষতা দিয়ে তৈরি।

ক্রায়োপোব

ক্রোমোসার্জারিতে সুঁইয়ের মতো লম্বা যে যন্ত্রের সাহায্যে আক্রান্ত টিউমারে নাইট্রোজেন ও আর্গন গ্যাস সরবরাহ করা হয় তাকে ক্রায়োপোব বলে।

SPARSO

Space Research and Remote sensing Organisation

ড্রোন

পাইলটবিহীন বিমান যা নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে চালনা করা হয়।

স্পেমিং

অনাকাঙ্ক্ষিত ম্যাসেজসমূহ ব্যাপকভাবে প্রেরণে Electronic Message System সমূহ ব্যবহার করাকে Spamming বলে।

ফিশিং

হ্যাকার কর্তৃক ব্যবহারকারীকে ফাঁদে ফেলে তার সকল ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে সর্বশান্ত করাকে ফিশিং বলে।

]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7/feed/ 0
বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%93-%e0%a6%b6/ https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%93-%e0%a6%b6/#respond Sun, 24 Mar 2024 08:05:37 +0000 https://bpbangla.com/?p=897 শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

শব্দের প্রয়োগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে এই ধরণের ভুল হয়ে থাকে।

  • দরিদ্র – বিশেষণ
  • দারিদ্র্য / দরিদ্রতা- বিশেষ্য
  • ধীর – বিশেষণ
  • ধীরতা / ধৈর্য – বিশেষ্য

তাই, দারিদ্র্যতা / ধৈর্যতা শব্দগুলো ব্যবহার করা অপপ্রয়োগ হবে।

  • কনিষ্ঠ – সবচেয়ে ছোট
  • লঘিষ্ঠ – সবচেয়ে লঘু
  • গরিষ্ঠ – সবচেয়ে বড়
  • শ্রেষ্ঠ – সবার সেরা

তাই, সর্বকনিষ্ঠ, সর্বশ্রেষ্ঠ, লঘিষ্ঠতর, গরিষ্ঠতম এগুলো ব্যবহার অপপ্রয়োগ।

বিশেষ্যের সাথে ইত, ইয় প্রত্যয়, এবং বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত করে নতুন বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন, চিত্র+ইত= চিত্রিত, স+চিত্র= সচিত্র। কিন্তু বিশেষণের সাথে এসব উপসর্গ বা প্রত্যয় যুক্ত করা অপপ্রয়োগ।

  1. আকুলিত – অশুদ্ধ
  2. আকুল – শুদ্ধ
  1. সলজ্জিত – অশুদ্ধ
  2. সলজ্জ – শুদ্ধ
  1. ব্যাকুলিত – অশুদ্ধ
  2. ব্যাকুল – শুদ্ধ

বাহুল্য দোষঃ

সু+আগত = স্বাগত, তাই সুস্বাগত = সু+সু+আগত। সুস্বাগত অপপ্রয়োগ অশ্রু অর্থ চোখের জল, তাই অশ্রুজল অশুদ্ধ। কেবল/শুধু অর্থ মাত্র। তাই কেবলমাত্র, শুধুমাত্র অশুদ্ধ। সময় অর্থ কাল। তাই সময়কাল অশুদ্ধ।

দৃষ্টিশক্তি অর্থ চোখের/দর্শনের ক্ষমতা। তাই চোখের দৃষ্টিশক্তি অশুদ্ধ।

শব্দের পূর্বে “স” উপসর্গ যোগ করে সহ/সঙ্গে বোঝায়। যেমনঃ

  • সস্ত্রীক = স্ত্রী সহ
  • সপরিবারে = পরিবার সহ

স্ব অর্থ নিজের।

  • তাই স্বপরিবারে, স্বস্ত্রীক এগুলো অশুদ্ধ।

বচনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

একই বাক্যে একাধিক বহুবচনগত শব্দ/বিভক্তি ব্যবহার সমীচীন নয়।

  1. অশুদ্ধ – সব গ্রামগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে।
  2. শুদ্ধ – সব গ্রামে ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে। / গ্রামগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে।
  1. অশুদ্ধ – সকল শিক্ষকবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
  2. শুদ্ধ – সকল শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। / শিক্ষকবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

একবচন বিশেষ্যের সর্বনাম একবচন ও বহুবচন বিশেষ্যের সর্বনাম বহুবচন হতে হবে।

  1. অশুদ্ধ – যেসব ছেলেরা স্কুল ফাঁকি দিয়েছে, সে বখাটে।
  2. শুদ্ধ যেসব ছেলেরা স্কুল ফাঁকি দিয়েছে, তারা বখাটে। / যে ছেলেটি স্কুল ফাঁকি দিয়েছে, সে বখাটে।
  1. অশুদ্ধ – কিছু কিছু মানুষ আছে যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
  2. শুদ্ধবাক্য: কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না।

টি, টা, খানা, খানি, গাছা, গাছি দ্বারা একবচন বোঝায়।

  1. অশুদ্ধ – আমার অনেকগুলো কলমটি হারিয়ে গেছে।
  2. শুদ্ধ – আমার অনেকগুলো কলম হারিয়ে গেছে। / আমার কলমটি হারিয়ে গেছে।

‘টা/টি/খানা/খানি’ ব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে ‘এই’ বা ‘ঐ’ ব্যবহার করে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়।

  1. অশুদ্ধ – আমি এই মানুষটিকে চিনি।
  2. শুদ্ধ – আমি এই মানুষকে চিনি। / আমি মানুষটিকে চিনি।

উপসর্গের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর ধাতুর দন্ত্য-স এর স্থলে মূর্ধন্য-ষ হয়।

  • অভি+সঙ্গ = অভিসঙ্গ (অশুদ্ধ), অভিষঙ্গ (শুদ্ধ)
  • নি+সিদ্ধ = নিসিদ্ধ (অশুদ্ধ), নিষিদ্ধ (শুদ্ধ)

অতিরিক্ত উপসর্গ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়।

  1. অশুদ্ধ – অক্লান্তিহীনভাবে সকলে চত্বরে জমায়েত হচ্ছে।
  2. শুদ্ধ – ক্লান্তিহীনভাবে সকলে চত্বরে জমায়েত হচ্ছে।

শব্দের শেষে ত্ব/তা প্রত্যয় যুক্ত হলে এর পূর্ববর্তী ঈ-কার, ই-কারে পরিণত হয়।

  • প্রতিযোগী+তা = প্রতিযোগিতা
  • বিরোধী+তা = বিরোধিতা

বাংলা ভাষায় শব্দের শেষে সর্বদা (পূর্বে যেগুলো সংস্কৃতে প্রচলিত ছিল) স্ত্রীবাচক অর্থে ঈ- কার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না।

  • ভয়ঙ্কর (শুদ্ধ), ভয়ঙ্করী (অশুদ্ধ)
  • চাঁদমুখ (শুদ্ধ), চাঁদমুখী (অশুদ্ধ)

অপ্রয়োজনে শব্দের শেষে নারীবাচক ঈ, নি, ইনি, ইনী প্রত্যয় যোগ করলে অশুদ্ধ হয়।

  • নির্বাচন (শুদ্ধ), নির্বাচনি (অশুদ্ধ) সংশোধন (শুদ্ধ), সংশোধনী (অশুদ্ধ) পুনর্মিলন (শুদ্ধ), পুনর্মিলনী (অশুদ্ধ)

একই শব্দে একাধিক নারীবাচক প্রত্যয় যোগ করা সমীচীন নয়।

  • অভাগা+ঈ = অভাগী (শুদ্ধ) + ইনী = অভাগিনী (অশুদ্ধ)
  • সুকেশ + আ = সুকেশা (শুদ্ধ) + ইনী = সুকেশিনী (অশুদ্ধ) চাতক + ঈ = চাতকী (শুদ্ধ)+ ইনী = চাতকিনী (অশুদ্ধ)

কারকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

কারকের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটে যেতে পারে।

বস্তুর প্রাণিবাচক শব্দে বা ব্যক্তির নামের সঙ্গে ‘কে’ বসে না।

  1. অশুদ্ধ – সাপুড়ে সাপকে খেলায়।
  2. শুদ্ধ – সাপুড়ে সাপ খেলায়।

বহুবচনজাতীয় শব্দে ‘কে’ বসে না।

  1. অশুদ্ধ – ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দাও।
  2. শুদ্ধ – ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও।

এক শব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়।

  1. অশুদ্ধ – চোখেতে ভীষণ যন্ত্রণা।
  2. শুদ্ধ – চোখে ভীষণ যন্ত্রণা।

বিভক্তির অভাবে অপপ্রয়োগ ঘটে থাকে।

  1. অশুদ্ধ – তাহার কথা বিশ্বাস নেই।
  2. শুদ্ধ – তাহার কথায় বিশ্বাস নেই।
  1. অশুদ্ধ – রাত আকাশে অনেক তারা।
  2. শুদ্ধ – রাতের আকাশে অনেক তারা।

সমোচ্চারিত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

সমোচ্চারিত শব্দের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়।

  1. অশুদ্ধ – ঘরে ফিরে পরিষ্কার কাপর পড়ে পরতে বসো।
  2. শুদ্ধ – ঘরে ফিরে পরিষ্কার কাপড় পরে পড়তে বসো।
  1. অশুদ্ধ – লোকটি প্রতিদিন দিনের দাওয়াত দিতে বেরোয়।
  2. শুদ্ধ – লোকটি প্রতিদিন দ্বীনের দাওয়াত দিতে বেরোয়।
  1. অশুদ্ধ – ঘোরায় চড়ে ঘোড়া আমার বড় প্রিয়।
  2. শুদ্ধ – ঘোড়ায় চড়ে ঘোরা আমার বড় প্রিয়।
  1. অশুদ্ধ – তিনের বাক্সে টিনটি পয়সা।
  2. শুদ্ধ – টিনের বাক্সে তিনটি পয়সা।

শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

শব্দদ্বিত্বের ভুল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ ঘটানো হয়।

সমার্থক শব্দের বাহুল্য থাকলে অপপ্রয়োগ ঘটে।

  1. অশুদ্ধ – তার কানের শ্রবণশক্তি কম।
  2. শুদ্ধ- তার শ্রবণশক্তি কম।

ধ্বন্যাত্মক শব্দের ভুল প্রয়োগ করলে তা অশুদ্ধ হয়।

  1. অশুদ্ধ – ঝিরি ঝিরি ঢোল বাজছে।
  2. শুদ্ধ – ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে।

শব্দ জুটির ক্ষেত্রে পরিবর্তন করলে অশুদ্ধ হয়।

  1. অশুদ্ধ – এই বাড়ির রীতি-বিধান আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
  2. শুদ্ধ – এই বাড়ির রীতি-নীতি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। / এই বাড়ির বিধি-বিধান আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
  1. অশুদ্ধ – ছোট-মেঝ সবার মতই গুরুত্বপূর্ণ।
  2. শুদ্ধ – ছোট-বড় সবার মতই গুরুত্বপূর্ণ।

বাক্য ও বাচ্যের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

বাক্যের বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাচ্য।

  1. অশুদ্ধ – শিকারি দ্বারা বাঘ হত্যা হয়েছে।
  2. শুদ্ধ – শিকারি দ্বারা বাঘ নিহত হয়েছে।
  1. অশুদ্ধ – আসামীকে জরিমানা করেছে।
  2. শুদ্ধ – আসামীকে জরিমানা করা হয়েছে।
  1. অশুদ্ধ – আপনার এ কাজে দেশের গৌরব লোপ হয়েছে।
  2. শুদ্ধ – আপনার এ কাজে দেশের গৌরব লুপ্ত হয়েছে।

বাগধারার মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

বাগধারায় বিভিন্ন শব্দ, নিজস্ব অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাই তাদের পরিবর্তন ঘটালে অর্থে অসঙ্গতি চলে আসে।

  1. অশুদ্ধ – এ বাড়ির মুখ তোলার দায়িত্ব এবার তোমার হাতে।
  2. শুদ্ধ – এ বাড়ির মুখ রক্ষার দায়িত্ব এবার তোমার হাতে।
  1. অশুদ্ধ – এই ব্যাপারে তোমার মাথা চুলকানোর প্রয়োজন নেই।
  2. শুদ্ধ – এই ব্যাপারে তোমার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।
  1. অশুদ্ধ – এখন পরিশ্রম কর, সারা জীবন মাথা বাঁকা করে চলবে।
  2. শুদ্ধ – এখন পরিশ্রম কর, সারা জীবন মাথা উঁচু করে চলবে।
  1. অশুদ্ধ – শেষ পর্যন্ত ডাক্তার রোগে ধরতে পেরেছেন।
  2. শুদ্ধ – শেষ পর্যন্ত ডাক্তার রোগ ধরতে পেরেছেন।

প্রবাদের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

প্রবাদে বিভিন্ন শব্দ, নিজস্ব অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাই তাদের পরিবর্তন ঘটালে অর্থে অসঙ্গতি চলে আসে।

  1. অশুদ্ধ – অন্ধকারে পাটকেল ছুঁড়ে লাভ নেই।
  2. শুদ্ধ – অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে লাভ নেই।
  1. অশুদ্ধ – হঠাৎ অনেক টাকা পেয়ে তার তো আঙুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে।
  2. শুদ্ধ – হঠাৎ অনেক টাকা পেয়ে তার তো আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।
  1. অশুদ্ধ – গরিবের হাতিরোগ ভালো নয়।
  2. শুদ্ধ – গরিবের ঘোড়ারোগ ভালো নয়।
  1. অশুদ্ধ – কাছের বন্ধু একটিও নয়, সব শরবতের মাছি।
  2. শুদ্ধ – কাছের বন্ধু একটিও নয়, সব দুধের মাছি।

যতির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

যতিচিহ্নের ব্যবহারে হেরফের করলে, শব্দের অর্থ ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয়ে যায় এবং অপপ্রয়োগ ঘটতে পারে।

জিজ্ঞাসা অর্থেঃ-

  1. অশুদ্ধ – তুমি কাল এসো।
  2. শুদ্ধ – তুমি কাল এসো?
  1. অশুদ্ধ – বাগানের ফুল ছিঁড়ো, না ছিঁড়লে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
  2. শুদ্ধ – বাগানের ফুল ছিঁড়ো না, ছিঁড়লে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
  1. অশুদ্ধ – শিক্ষক বলেছেন তুমি আমার সাথে দেখা করবে।
  2. শুদ্ধ – শিক্ষক বলেছেন, “তুমি আমার সাথে দেখা করবে।”
  1. অশুদ্ধ – মাটি পানি ও বায়ু এইতো আমাদের পরিবেশ।
  2. শুদ্ধ – মাটি, পানি ও বায়ু- এইতো আমাদের পরিবেশ।

বাক্যে সর্বনাম, যোজক, ক্রিয়াপদ ও ক্রিয়াকালের সংগতিপূর্ণ প্রয়োগ

বাক্যে সর্বনাম, যোজক, ক্রিয়াপদ ও ক্রিয়াকালের সংগতিপূর্ণ প্রয়োগ না ঘটলে অর্থবিকৃতি হতে পারে।

বাক্যে সর্বনামের সংগতিপূর্ণ প্রয়োগ

  1. অশুদ্ধ – আমি, তুমি ও সে বেড়াতে যাবে।
  2. শুদ্ধ – আমি, তুমি ও সে বেড়াতে যাব।
  1. অশুদ্ধ – ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা ভাষার ইতিহাসে সে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।
  2. শুদ্ধ – ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলা ভাষার ইতিহাসে তিনি এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।
  1. অশুদ্ধ – তুমি চলে যাও, আপনাকে দিয়ে কাজ হবে না।
  2. শুদ্ধ- তুমি চলে যাও, তোমাকে দিয়ে কাজ হবে না। / আপনি চলে যান, আপনাকে দিয়ে কাজ হবে না।

বাক্যে যোজকের সংগতিপূর্ণ প্রয়োগ

  1. অশুদ্ধ – নীপা অথবা দীপা দুই বোন।
  2. শুদ্ধ – নীপা এবং দীপা দুই বোন।
  1. অশুদ্ধ – আকাশ এতো মেঘলা হলো, এবং বৃষ্টি হলো না।
  2. শুদ্ধ – আকাশ এতো মেঘলা হলো, অথচ/কিন্তু/তবুও বৃষ্টি হলো না।
  1. অশুদ্ধ – যত গর্জে তবে বর্ষে না।
  2. শুদ্ধ- যত গর্জে তত বর্ষে না।

বাক্যে ক্রিয়াপদ ও ক্রিয়াকালের সংগতিপূর্ণ প্রয়োগ

  1. অশুদ্ধ – তুমি গতকাল আসবে।
  2. শুদ্ধ – তুমি গতকাল এসেছিলে।
  1. অশুদ্ধ – প্রার্থনা করি দ্রুত আরোগ্য লাভ করতেন।
  2. শুদ্ধ – প্রার্থনা করি দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন।
  1. অশুদ্ধ – আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি হয়।
  2. শুদ্ধ- আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে।

গুরুচণ্ডালী দোষজনিত ভুল

বাক্যে সাধু ও চলিত উভয় ভাষার মিশ্রণ ঘটলে সেই বাক্য গুরুচণ্ডালী দোষে দুষ্ট হয়।

  1. অশুদ্ধ – আমাকে যেতে হইবে।
  2. শুদ্ধ – আমাকে যাইতে হইবে। / আমাকে যেতে হবে।
  1. অশুদ্ধ – তাহার সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
  2. শুদ্ধ – তাহার সাথে আমি কিছু কথা বলিতে চাই।/ তার সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
  1. অশুদ্ধ – লোকটি বটবৃক্ষের তলায় দাঁড়িয়ে আছে।
  2. শুদ্ধ- লোকটি বটগাছের তলে দাঁড়িয়ে আছে। / লোকটা বটবৃক্ষের তলায় দাঁড়াইয়া আছে।
]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%93-%e0%a6%b6/feed/ 0
বাক্য ও বাক্যের প্রকারভেদ | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ad%e0%a7%87/ https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ad%e0%a7%87/#respond Sat, 23 Mar 2024 11:39:30 +0000 https://bpbangla.com/?p=893 বাক্য

বাক্যের পরিচয়:

আমরা বাক্য তৈরি করি এক বা একাধিক শব্দ একত্রে সাজিয়ে। যেমন- ‘আমি বাড়ি গিয়ে ভাত খাব।’ মনে রাখতে হবে, শব্দ যখন বাক্যে স্থান পায় তখন তার পরিচয় হয় ভিন্ন। বাক্যের শব্দকে বলে পদ। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যোগে করলেই পদ তৈরি হয়।

বাক্যগঠন:

বিভিন্ন পদের সাহায্যে বাক্য গঠিত হয়। কিন্তু পদগুলো পরপর সাজালেই বাক্য হবে না।

যেমনঃ বসেছিলাম সকালে পাশে রাস্তার আমি। এ-বাক্যে পাঁচটি পদ আছে। কিন্তু বাক্য হয়নি। কারণ পদগুলোর সাহায্যে কোনো অর্থ বোঝাচ্ছে না।

বাক্যের পদগুলো ঠিকমতো পরপর বসালেই চেহারা বদলে যাবে, বাক্যটি অর্থপূর্ণ হবে। যেমন- আমি সকালে রাস্তার পাশে বসেছিলাম।

বাংলা বাক্যের গঠন হলো কর্তা কর্ম + ক্রিয়া (Subject + Object + Verb), সংক্ষেপে SOV।

বাক্যের গুণ:

ভাষার বিচারে বাক্যের এ গুণ তিনটি গুণ থাকা চাই। যথা:

  1. আকাঙ্ক্ষা
  2. আসত্তি
  3. যোগ্যতা

আকাঙ্ক্ষা:

বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্যপদ শোনার যে ইচ্ছা তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন: চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে- এইটুকু মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে না, আরও কিছু জানার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু যদি বলা যায় চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তবে বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে। অর্থাৎ কোনো বাক্য শ্রবণ করে যদি বাক্যের উদ্দেশ্য বোঝা যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে বাক্যটির আকাঙ্ক্ষা গুণটি সম্পূর্ণ।

আসত্তি:

বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমন: কাল বিতরণী হবে উৎসব আমাদের পুরস্কার স্কুলে অনুষ্ঠিত। বাক্যটি ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু, কাল আমাদের স্কুলে পুরস্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, বাক্যটি আসত্তিসম্পন্ন। অর্থাৎ, বাক্যের পদগুলো যদি এরুপ সজ্জিত থাকে যে বাক্যের সম্পূর্ণ অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, তবে তার আসত্তি গুণটি সম্পূর্ণ।

যোগ্যতা:

বাক্যস্থিত পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন: বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয় বাক্যটি যোগ্যতা সম্পন্ন, কিন্তু বর্ষার রোদে প্লাবনের সৃষ্টি হয় বললে বাক্যটি তার যোগ্যতা হারাবে। কারণ, রোদের কারণে কখনো প্লাবণ সঙ্গঠিত হয় না। অর্থাৎ, বাক্যের অর্থ যেন সত্য ও যুক্তিযুক্ত হয়। তাহলেই বাক্যের যোগ্যতা থাকবে।

বাক্যের অংশ :

প্রতিটি বাক্যে ২টি অংশ থাকে: উদ্দেশ্য ও বিধেয়।

উদ্দেশ্য: বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন: আব্দুরহিম স্কুলে যায়। এখানে আব্দুর রহিম উদ্দেশ্য।

বিধেয়: উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয় তাই বিধেয়। আর স্কুলে যায় বিধেয়।

গঠন অনুসারে বাক্যের প্রকারভেদ:

গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা:

  1. সরল বাক্য (কর্তা+কর্ম+ক্রিয়া)
  2. জটিল বাক্য (সাপেক্ষ সর্বনাম+বাক্য+সাপেক্ষ সর্বনাম+বাক্য)
  3. যৌগিক বাক্য (….+অব্যয়+….)

সরল বাক্য :

যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন- ছেলেরা ফুটবল খেলছে।

জটিল বাক্য :

যে বাক্যে একটি প্রধান বাক্যাংশ এবং এক বা একাধিক অপ্রধান বাক্যাংশ থাকে, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। যেমন- যে মানুষের সেবা করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।

যৌগিক বাক্য :

পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা দুয়ের অধিক বাক্য যখন কোনো সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন- সে দরিদ্র, কিন্তু সুখী।

বাক্য গঠনের নিয়ম

বাক্য গঠিত হয় শব্দ দিয়ে এবং বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি শব্দকে বলা হয় পদ। বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দ বা পদ সাজানোর সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। বাক্যে পদ সংস্থাপনার এ পদ্ধতিকেই বাক্যের পদ সংস্থাপন রীতি বা পদক্রম বলা হয়। ভাষার শুদ্ধ ও সার্থক প্রয়োগের জন্য পদ সংস্থাপনরীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। বাক্যে পদের এলোমেলো ব্যবহার হলে মনের ভাব সার্থকভাবে প্রকাশিত হয় না। যেমন: ‘ভাই দুই আমরা যাই ঢাকা’ বললে কোনো অর্থ বোঝা যায় না, কিন্তু ঐ শব্দগুলো এভাবে পদক্রম অনুযায়ী সাজালে অর্থ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন: ‘আমরা দুই ভাই ঢাকা যাই।’

বাক্যে পদ বসানোর কতিপয় প্রচলিত নিয়ম

১. বাক্যে সবচেয়ে প্রচলিত পদবিন্যাস হচ্ছে কর্তা প্রথমে, কর্ম মাঝে এবং ক্রিয়া শেষে। যেমন: আমি বই পড়ি। সে বাড়ি যায়।

২. ক্রিয়া বিশেষণ ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন: রানা ডুকরে কাঁদছে। রহিত দ্রুত হাঁটছে।

৩. বাক্যে কর্ম থাকলে ক্রিয়া বিশেষণ কর্মের আগে বসে। যেমন: মামুন নীরবে বই পড়ছে। শিক্ষক জোরে চাবুক কষছেন।

৪. সময়বাচক ও স্থানবাচক পদ কর্মের আগে বসে। যেমন: কাল কলেজ বন্ধ ছিল। আমি বৃহস্পতিবার ঢাকা যাব।

৫. না-বোধক অব্যয় সমাপিকা ক্রিয়ার পরে বসে। যেমন:আমি খাইনি। কে পড়া শেখেনি?

৬. প্রশ্নবোধক সর্বনাম ক্রিয়ার আগে বসে। যেমন: আপনি কী চান? আকাশে কী দেখছ?

৭. বিধেয় বিশেষণ বিশেষ্যের পরে বসে। যেমন: ছেলেটা বুদ্ধিমান। লোকটি বোকা।

৮. বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সম্বন্ধ পদ বিশেষ্যের পরেও বসে। যেমন: মুখটি তোমার কিন্তু সুন্দর। প্রাণ তার খুব শক্ত।

তবে মনে রাখতে হবে, এই পদবিন্যাস অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়। বক্তার মনোভাব, বলার বিশেষ ধারা বা স্টাইল ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদির ওপর নির্ভর করে পদবিন্যাস রীতি কেমন হবে।

]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ad%e0%a7%87/feed/ 0
বাক্যের রুপান্তর | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8/ https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8/#respond Sat, 23 Mar 2024 10:26:58 +0000 https://bpbangla.com/?p=885 বাক্যের রুপান্তর

যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্য

বাক্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, বাক্যের

  • (i) অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।
  • (ii) যৌগিক বাক্যের যে কোন একটি স্বাধীন খন্ডবাক্যকে (অর্থের গুরুত্ব বিবেচনা করে) অপরিবর্তনীয় রেখে সরল বাক্যের কাঠামোতে আনতে হবে। অর্থাৎ কর্তা বিধেয় (সমাপিকা ক্রিয়া)।
  • (iii) অবশিষ্ট স্বাধীন খন্ডবাক্যগুলোকে অসমাপিকা ক্রিয়ার সাহায্যে সরল বাক্যে পরিবর্তন করা হয়। তবে, এর ব্যতিক্রম থাকে।
  • (iv) সংযোজক অব্যয় বাদ দেয়া হয়।
  1. যৌগিক: সে আমাকে ডেকেছিল কিন্তু আমি যাইনি।
  2. সরল: সে আমাকে ডাকলেও আমি যাইনি।
  1. যৌগিক: লোকটি দরিদ্র এবং সৎ।
  2. সরল: লোকটি দরিদ্র হলেও সৎ।
  1. যৌগিক : বাতাসে অমরতার গন্ধ, তবু তার সেদিকে খেয়াল নেই।
  2. সরল: বাতাসে অমরতার গন্ধ থাকলেও তার সেদিকে খেয়াল নেই।

জটিল থেকে সরল

লক্ষণীয়,

  • (i) অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।
  • (ii) শুধুমাত্র অপ্রধান খন্ডবাক্যের অসমাপিকা ক্রিয়াকে সমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করতে হবে।
  • (iii) সমাসবদ্ধ করে বা প্রত্যয় যোগ করে সরল বাক্যের কাঠামো তৈরি করতে হবে।
  • ( iv) জটিল বাক্যের শর্তযুক্ত পদ বা সাপেক্ষ সর্বনাম ও অন্যান্য অব্যয় পদ দিতে হবে।
  1. জটিল: যখন স্কুল ছুটি হয়, তখন বালকেরা মাঠে খেলা শুরু করে।
  2. সরল : স্কুল ছুটি হলে বালকেরা মাঠে খেলা শুরু করে। (হলে অসমাপিকা ক্রিয়া)
  1. জটিল: সে যে কথা বলে তা ঠিক নয়।
  2. সরল: তার কথা ঠিক নয়।

জটিল : ফের যদি আসি তবে সিঁধকাঠি সঙ্গে করিয়াই আসিব।

সরল থেকে জটিল

লক্ষণীয়,

  • (i) সরল থেকে জটিল ও যৌগিক বাক্যে পরিবর্তন করার সময় অর্থের আমূল পরিবর্তন করা যাবে না।
  • (ii) জটিল ও যৌগিক বাক্যের কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাক্য তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ জটিল বাক্য থেকে শর্তযুক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম ও যৌগিকের ক্ষেত্রে সংযোজক অব্যয় যোগ করতে হবে।
  1. সরল : সকালে সূর্য ওঠে।
  2. জটিল : যখন সকাল হয় তখন সূর্য ওঠে।
  1. সরল: রকিব খুব বুদ্ধিমান ছেলে।
  2. জটিল : যার নাম রকিব সে খুব বুদ্ধিমান।

সরল থেকে যৌগিক

  1. সরল : তিনি আর বেঁচে নেই।
  2. যৌগিক : তিনি আগে ছিলেন, এখন নেই (এখানে কমা (‘) যৌগিক অব্যয়ের কাজ করে)
  1. সরল : শিক্ষক এলেও ক্লাস হয়নি।
  2. যৌগিক : শিক্ষক এসেছেন, কিন্তু ক্লাস হয়নি। (জটিল বাক্যের মতো মনে হলেও এখানে শর্তযুক্ত বাক্য গঠিত হয়নি, সেজন্য বাক্যটি যৌগিক)

অনুজ্ঞাসূচক বাক্য

আজ্ঞা, আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, আমন্ত্রণ, নিষেধ ইত্যাদি যে বাক্যে প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় অনুজ্ঞাসূচক বাক্য। এর অন্য নাম আজ্ঞাসূচক বাক্য, আজ্ঞা বাচক বাক্য, অনুজ্ঞাসূচক বাক্য, অনুজ্ঞাবোধক বাক্য, আদেশসূচক বাক্য প্রভৃতি। যেমন: তোমার ঘোমটা খুলে দাও। তোমার নয়ন তুলে চাও।

প্রশ্নসূচক বাক্য

কোনো ঘটনা, ভাব বা বক্তব্য সম্পর্কে যে বাক্যে কোনো প্রশ্ন থাকে তাকে বলা হয় প্রশ্নবোধক বাক্য। এর অন্য নাম প্রশ্নমূলক বাক্য। প্রশ্নাত্মক বাক্য, জিজ্ঞাসাত্মক বাক্য প্রভৃতি। যেমন: তুই দাঁড় টানতে পারিস?

আবেগসূচক বাক্য

যে বাক্যে আবেগ, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, ভয় ইত্যাদি প্রকাশ পায় সেই বাক্যকে আবেগসূচক বাক্য বলে । যেমন- হায় হায়! আমার কি সর্বনাশ হয়ে গেল! বাঃ, কি সুন্দর পাখি!

অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর

অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :

১. বাক্যে না নয়, নহে নি নেই, নাহি নাই ইত্যাদি ন-ঞর্থক অব্যয়যোগে অস্তিবাচক বাক্যের বিধেয় ক্রিয়াকে (সমাপিকা ক্রিয়া) নেতিবাচক করতে হবে। যেমনঃ

  1. বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়।
  2. বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি কঠিন হয় না।

২. হ্যাঁ সূচক বাক্যকে না করতে হলে মূল অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্য পরিবর্তন করতে হবে। যেমনঃ

  1. বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়।
  2. বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি কঠিন হয় না।

অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :

৩. বাক্যের বিশেষণ পদটিকে বিপরীত শব্দে রূপান্তর করতে হবে। যেমনঃ

  1. এভাবে সমাজ অচল হয়ে পড়ে।
  2. এভাবে সমাজ চলে না।

৪. প্রয়োজন মত বাক্যের অন্য শব্দকে ‘না’ সূচক বাক্যের প্রয়োগের আওতাভুক্ত করতে হবে।যেমনঃ

  1. হৈমন্তী চুপ করিয়া রহিল।
  2. হৈমন্তী চুপ না থাকিয়া পারিল না।

৫. ‘না’ বাচক ক্রিয়া ও ‘না’ বাচক শব্দ বা ‘না’ বাচক অব্যয় মিলে বাক্যের অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক ভাবটি বজায় রাখতে হয়। যেমনঃ

  1. জন্মভূমিকে সবাই ভালোবাসে।
  2. জন্মভূমিকে ভালোবাসে না এমন কেউ নেই।

নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর

নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :

১. বাক্যে না, নয়, নহে, নি, নেই নাহি নাই ইত্যাদি ন-ঞর্থক অব্যয় তুলে দিতে হয়।যেমনঃ

  1. তারা যাবে না কোথাও।
  2. তারা এখানেই থাকবে।

২. শব্দের পরিবর্তন ঘটিয়ে বাক্যে হ্যাঁ সূচক ভাবটা ফুটিয়ে তুলতে হয়। যেমনঃ

  1. আমি অন্য ঘরে যাব না।
  2. আমি এ ঘরে থাকব।

৩. বাক্যের বিশেষণ পদটিকে বিপরীত শব্দে রূপান্তর করতে হয়।যেমনঃ

  1. পৃথিবী চিরস্থায়ী নয়।
  2. পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী।

৪. প্রয়োজন মত নেতিবাচক শব্দের বাক্যাংশকে অস্তিবাচক শব্দ দ্বারা অস্তিবাচকে রূপান্তর করতে হয়। যেমনঃ

  1. দেশের প্রচলিত ধর্মে কর্মে তাহার আস্থা ছিল না।
  2. দেশের প্রচলিত ধর্মে কর্মে তাহার অনাস্থা ছিল।

নির্দেশক বাক্য

নির্দেশক বাক্য:- যে বাক্যে কোন বক্তব্য, তথ্য বা বিবৃতি প্রকাশ করা হয় তাকে নির্দেশক বাক্য বলে। যেমন- এবছর বেশি বৃষ্টি হয়নি। আমাদের একটি বড় বাগান আছে।

নির্দেশক বাক্য আবার দুই রকমের-

  • (I) ইতিবাচক বাক্য বা হ্যাঁ বাচক ও
  • (II) নেতিবাচক বা নঞর্থক বা না বাচক।

(i) ইতিবাচক বাক্য বা হ্যাঁ বাচকঃ যে বাক্যের অর্থকে স্বীকৃতি দেয়া হয় তাকে ইতিবাচক বাক্য বা হ্যাঁ বাচক বাক্য বলে।

যেমনঃ ছাত্রীরা রোজ বাংলা ক্লাস করে। আমি গান শুনতে ভালবাসি।

(ii) নেতিবাচক বা নঞর্থক বা না বাচক বাক্যঃ যে বাক্যের অর্থ না বাচক অর্থাৎ নেতিবাচক, তখন তাকে নঞর্থক বাক্য বলে।

যেমনঃ আমি ভাত খাবো না।

ইতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর

ইতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্রঃ

১. মৌলিক বা মূল অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।

  1. অস্তিবাচকঃ ফুলকে সকলেই ভালোবাসে।
  2. প্রশ্নবাচকঃ ফুলকে কি সকলেই ভালোবাসে না?

২. কর্তার পরে প্রশ্নবাচক অব্যয় ব্যবহার করতে হয়।

  1. অস্তিবাচকঃ এরা অন্য জাতের মানুষ।
  2. প্রশ্নবাচকঃ এরা কি অন্য জাতের মানুষ নয়?

৩. ক্রিয়ার পরে ন-ঞর্থক অব্যয় ব্যবহার করতে হয়।

  1. অস্তিবাচকঃ শৈশবে তার বাবা মারা যান।
  2. প্রশ্নবাচকঃ শৈশবে কি তার বাবা মারা যান নি?

৪. বাক্য শেষে প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) ব্যবহার করতে হয়। 

  1. অস্তিবাচকঃ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
  2. প্রশ্নবাচকঃ বাংলাদেশ কি একটি উন্নয়নশীল দেশ নয়?

নেতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তর

নেতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্রঃ

১. নেতিবাচক বাক্যের না-সূচক শব্দ তুলে দিতে হয়।

  1. নেতিবাচকঃ এতে দোষ নেই।
  2. প্রশ্নবাচকঃ এতে দোষ কী?

২. মূল বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকে।

  1. নেতিবাচকঃ টাকায় সব হয় না।
  2. প্রশ্নবাচকঃ টাকায় কি সব হয়?

৩. ন-ঞর্থক বাক্য হলে ‘নাকি’, ‘নয়-কি’ সহ জিজ্ঞাসার চিহ্ন (?) ব্যবহার করতে হয়।

  1. নেতিবাচকঃ সুদান উন্নয়নশীল দেশ নয়।
  2. প্রশ্নবাচকঃ সুদান উন্নয়নশীল দেশ নয় কি?

প্রশ্নবোধক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর

প্রশ্নবোধক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সুত্রঃ

১. মূল বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।

  1. প্রশ্নবোধকঃ মানুষ কি মরণশীল নয়?
  2. ইতিবাচকঃ মানুষ মরণশীল।

২. প্রশ্নবাচক ‘কি’ অব্যয় বিলুপ্ত হবে।

  1. প্রশ্নবোধকঃ ফুল কি সকলেই ভালোবাসে না?
  2. ইতিবাচকঃ ফুল সকলেই ভালোবাসে।

৩. নঞর্থক অব্যয় পদও বিলুপ্ত হবে।

  1. প্রশ্নবোধকঃ ভুল কি সকলেই করে না?
  2. ইতিবাচকঃ সকলেই ভুল করে।

৪. জিজ্ঞাসা (?) চিহ্ন স্থানে দাঁড়ি বসাতে হবে।

  1. প্রশ্নবোধকঃ মানুষ কি মরণশীল নয়?
  2. ইতিবাচকঃ মানুষ মরণশীল।

প্রশ্নবোধক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর

প্রশ্নবোধক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সুত্রঃ

১. মূল অর্থ বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।

  1. প্রশ্নবাচকঃ তারা কি পাষাণ?
  2. নেতিবাচকঃ তারা পাষাণ কি না জানি না।

২. প্রশ্নবোধক অব্যয় ‘কি’ তুলে দিতে হয়।

  1. নেতিবাচকঃ তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে না।
  2. নেতিবাচকঃ সরস্বতী বর দেবেন না।

৩. নেতিবাচক বা নঞর্থক না, নাই, নেই নি, জানি না, বুঝি না ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।

  1. প্রশ্নবাচকঃ তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে কি?
  2. নেতিবাচকঃ তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে না।

৪. বাক্যটিকে নেতিবাচক ভাব ধারায় গঠন করতে হয়।

  1. প্রশ্নবাচকঃ সরস্বতী বর দেবেন কি?
  2. প্রশ্নবাচকঃ তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে কি?

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

১। ক্রিয়ার সাথে ‘আ’ যুক্ত করতে হবে।

  1. অনুজ্ঞাসূচক: সবসময় সত্য কথা বলবে।
  2. নির্দেশক: সবসময় সত্য কথা বলা উচিৎ।

২। ‘উচিৎ’, ‘সঙ্গত’, ‘বিধেয়’, ‘অনুরোধ’- বাক্যের প্রয়োজন অনুযায়ী এই শব্দ গুলো বসাতে হবে।

  1. অনুজ্ঞাসূচক: সবসময় সত্য কথা বলবে।
  2. নির্দেশক: সবসময় সত্য কথা বলা উচিৎ।

৩। ‘নির্দেশ দিচ্ছি’, ‘আদেশ করছি’, ‘নিষেধ করছি’, ‘মিনতি করছি’- ইত্যাদি বিবৃতিমূলক পদ ব্যবহার করতে হবে।

তবে সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ক্রিয়া পদ কে অসমাপিকা ক্রিয়া হতে হবে।

  1. অনুজ্ঞাসূচক: তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও
  2. নির্দেশক: তোমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে নির্দেশ করছি।

৪। কর্তা না থাকলে উত্তম পুরুষ অনুযায়ী পড়তে হবে।

  1. অনুজ্ঞাসূচক: তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও
  2. নির্দেশক: তোমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে নির্দেশ করছি।

ইচ্ছাসূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

১। সমাপিকা ক্রিয়ার সাথে ‘তে’, ‘ইতে’ যোগ করে কৃদন্ত পদ তৈরি করতে হবে।

  1. ইচ্ছাসূচক : এমন কাজ করো না।
  2. নির্দেশক : এমন কাজ না করতে বলছি।

২। ‘ইচ্ছা করি’, ‘প্রার্থনা করি’, ‘কামনা করি’, ‘বলছি’, ‘প্রার্থনা করছি’- ইত্যাদি বিবৃতিমূলক পদগুচ্ছ যোগ করতে হবে।

  1. ইচ্ছাসূচক : সুখী হও
  2. নির্দেশক : তোমার সুখ কামনা করছি।

নির্দেশক বাক্যকে বিস্ময়সূচক বাক্যে রূপান্তর

১. অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

  1. নির্দেশক বাক্য: দৃশ্যটি বড় চমৎকার।
  2. বিস্ময়সূচক বাক্য: আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।

২. বাক্যের মধ্যে একটি বিস্ময়বোধক যোজক পদ যেমন: আহা, হায়, কী ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে।

  • নির্দেশক বাক্য: যা দেখলাম তা ভুলবার নয়।
  • বিস্ময়সূচক বাক্য: আহা! দৃশ্যটি ভুলবার নয়।

৩. বিশেষণ পদের আগে একটি ‘কী’ বিশেষণীয় বিশেষণ বসবে।

  • নির্দেশক বাক্য: দৃশ্যটি বড় করুণ।
  • বিস্ময়সূচক বাক্য: দৃশ্যটি কী করুণ!

৪. বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্যবোধক (!) চিহ্ন বসবে।

  • নির্দেশক বাক্য: এতো ভয়ানক দুঃখের কথা।
  • বিস্ময়সূচক বাক্য: কী ভয়ানক দুঃখের কথা!

বিস্ময়সূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর

১। মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।

  1. বিস্ময়সূচক: বাঃ! কি সুন্দর নাম।
  2. নির্দেশক: নামটি খুবই সুন্দর।

২। বিস্ময়সূচক বাক্যের কী, কেমন, কত, ভারী ইত্যাদি আবেগসূচক ক্রিয়াবিশেষণের পরিবর্তে বিশেষণ যোগ করতে হয়।

বিস্ময়সূচক: কী দারুণ কবিতাটি!

নির্দেশক: কবিতাটি অত্যন্ত দারুণ।

৩। বাক্যের শুরুতে উঃ, আঃ, আহা! ইত্যাদি আবেগবোধক অব্যয় পরিহার করতে হয়।

বিস্ময়সূচক বাক্য: আহা! দৃশ্যটি ভুলবার নয়।

নির্দেশক বাক্য: যা দেখলাম তা ভুলবার নয়।

৪. বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্যবোধক (!) চিহ্ন বসবে না।

বিস্ময়সূচক বাক্য: কী ভয়ানক দুঃখের কথা!

নির্দেশক বাক্য: এতো ভয়ানক দুঃখের কথা

]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8/feed/ 0
ক্রিয়ার ভাব | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a6%a4/ https://bpbangla.com/%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a6%a4/#respond Mon, 18 Mar 2024 00:54:33 +0000 https://bpbangla.com/?p=790 ক্রিয়ার ভাব

সমাপিকা ক্রিয়ার গঠন যে বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল ক্রিয়ার ভাব। সমাপিকা ক্রিয়ার কাজটি কী প্রকারে সম্পাদিত হচ্ছে এবং ক্রিয়া বিষয়ে বক্তার মনোভাব কী, তা বোঝার উপায়কেই ক্রিয়ার ভাব বলে।

ক্রিয়ার ভাবের দ্বারা বক্তার মনোভাবটি স্পষ্ট হয়। যেমন: বক্তা যদি বলে “আজ আমাদের স্কুল ছুটি।” তাহলে বোঝা যাচ্ছে বক্তা একটি ঘটনার বর্ণনা দিতে চাইছে। অপরদিকে বক্তা যদি বলে “তুমি কাল আমার বাড়ি যেও।” তাহলে বক্তার মনোভাবে অনুরোধ ধরা পড়ছে। এই পার্থক্যটি স্পষ্ট হয় ভাবের দ্বারা বা সহজ ভাষায় বললে দুটি বাক্যের মধ্যে এই পার্থক্যটিই ভাব।

ক্রিয়ার ভাবের প্রকারভেদ

ভাব কত প্রকার তা বলার আগে জানিয়ে রাখি: পৃথিবীর সব ভাষায় ভাবের সংখ্যা সমান নয়। এর কারণ এই নয় যে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মনোভাবের প্রকারভেদ সমান নয়। এর কারণ এই যে, সব ভাষায় সব ভাবের জন্য আলাদা আলাদা ক্রিয়ারূপ পাওয়া যায় না। কোনো ভাষায় কোনো একটি ভাবের জন্য আলাদা ক্রিয়ারূপ না পাওয়া গেলে সেই ভাবটি ঐ ভাষার ব্যাকরণে আলোচিত হবে না, এটাই স্বাভাবিক।

সংস্কৃত ভাষায় পাঁচটি ভাব ছিলো। বাংলা ভাষায় এদের মধ্যে সবকটির গুরুত্ব নেই। আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় কেবল তিনটি ভাবের কথাই বলেছেন। যেমন:

  • ১) বিবৃতি বা নির্দেশক ভাব,
  • ২) অনুজ্ঞা বা নিয়োজক ভাব এবং
  • ৩) অপেক্ষিত বা সংযোজক বা সম্ভাবক ভাব।

বিবৃতি বা নির্দেশক ভাব

যে ভাবে বক্তা কোনো ঘটনার বিবরণ দেয় বা বিবৃতি দেয়, তাকে বলা হয় নির্দেশক ভাব বা বিবৃতি ভাব।

নির্দেশক ভাবের উদাহরণ :

  • ছেলেটি প্রতিদিন মন দিয়ে পড়াশোনা করে।
  • রাখাল গোরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
  • আমি বুড়িগঙ্গার ওই পারে থাকি।
  • বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন।

অনুজ্ঞা ভাব

ক্রিয়ার যে ভাবে বক্তা কাউকে কিছু করতে আদেশ, অনুরোধ করে বা উপদেশ দান করে, তাকে অনুজ্ঞা ভাব বলে।

অনুজ্ঞা ভাবের উদাহরণ :

  • আমাকে একটা কলম দিও।
  • দরজাটা বন্ধ করে এসো।
  • জুতো বাইরে খুলুন।
  • বিমল একবার গিয়ে দেখে আসুক।
  • যিনি কাজ জানেন তিনি দায়িত্ব নিন।

অপেক্ষিত ভাব বা সংযোজক ভাব

একটি ক্রিয়া সম্পাদনের সাপেক্ষে অপর একটি ক্রিয়া সম্পাদিত হলে, প্রথম ক্রিয়াটির ভাবকে ঘটনান্তরপেক্ষিত বা সংযোজক বা সম্ভাবক ভাব বলে।

সংযোজক ভাবের উদাহরণ:

  • যদি তুমি যাও, তবে আমি যাবো।
  • যদি ছেলেরা খেতে চায়, খেতে দেবো।
  • যদি এখনই যাও, তাহলে ট্রেন পাবে।
  • যদি ক্ষমতায় কুলোয়, তবেই চেষ্টা করবো।
]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a6%a4/feed/ 0
সমাস | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%95/ https://bpbangla.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%95/#respond Sun, 17 Mar 2024 01:35:29 +0000 https://bpbangla.com/?p=776 সমাসঃ

সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া কে সমাস বলে।

যেমন: দেশের সেবা দেশসেবা।

সমাসের বিভিন্ন অংশঃ

সমস্তপদঃ

সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাস নিষ্পন্ন পদটির নাম সমস্ত পদ।

যেমনঃ বিলাত হতে ফেরত বিলাতফেরত।

এখানে, বিলাতফেরত হলো সমস্তপদ। সমাসবদ্ধ পদের প্রথম অংশকে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরবর্তী অংশকে বলা হয় উত্তরপদ বা পরপদ।

সমস্যমান পদঃ

সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদটির অন্তর্গত পদগুলোকে সমস্যমান পদ বলে।

যেমনঃ বিলাত হতে ফেরত বিলাতফেরত।

এখানে, ‘বিলাত’ ও ‘ফেরত’ এ দুটি শব্দই সমস্যমান পদ।

ব্যাসবাক্য, সমাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্যঃ

ব্যাসবাক্য: সমস্তপদকে ভেঙ্গে যে বাক্যাংশ করা হয় তাই হল ব্যাসবাক্য, সমাস বাক্য বা বিগ্রহ বাক্য।

যেমনঃ বিলাতফেরত বিলাত হতে ফেরত।

এখানে, ‘বিলাত হতে ফেরত’ হলো ব্যাসবাক্য।

সমাসের প্রকারভেদঃ

সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যেমনঃ

  • (১) দ্বন্দ্ব সমাস
  • (২) কর্মধারয় সমাস
  • (৩) তৎপুরুষ সমাস
  • (৪) বহুব্রীহি সমাস
  • (৫) দ্বিগু সমাস ও
  • (৬) অব্যয়ীভাব সমাস।

দ্বন্দ্ব সমাসঃ

যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ

  • তাল ও তমাল = তাল-তমাল,
  • দোয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম,
  • মা ও বাবা মা-বাবা।

কর্মধারয় সমাসঃ

যে সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকেই কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ

  • নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম,
  • শান্ত অথচ শিষ্ট = শান্তশিষ্ট,
  • কাঁচা অথচ মিঠা = কাঁচামিঠা।

তৎপুরুষ সমাসঃ

পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান ভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয় থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোন বিভক্তি থাকতে পারে। যেমনঃ

  • বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন,
  • মন দিয়ে গড়া = মনগড়া,
  • বসতের নিমিত্তে বাড়ি = বসতবাড়ি।

বহুব্রীহি সমাসঃ

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোন পদ কে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমনঃ

  • বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার বহুব্রীহি,
  • আয়ত লোচন যার আয়তলোচনা,
  • মহান আত্মা যার = মহাত্মা।

দ্বিগু সমাসঃ

সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমনঃ

  • তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল,
  • চৌরাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা,
  • তিনমাথার সমাহার = তেমাথা।

অব্যয়ীভাব সমাসঃ

পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয় এর অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

অব্যয়ীভাব সমাসে কেবল অব্যয়ের অর্থ যোগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়। যেমনঃ

  • জানু পর্যন্ত লম্বিত = আজানুলম্বিত,
  • মরণ পর্যন্ত আমরণ।
]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a7%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%95/feed/ 0
প্রকৃতি ও প্রত্যয় | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%93-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be/ https://bpbangla.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%93-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be/#respond Sun, 17 Mar 2024 00:01:59 +0000 https://bpbangla.com/?p=724 প্রকৃতি:

শব্দ বা ধাতুর মূলই হচ্ছে প্রকৃতি। অর্থাৎ ‘মৌলিক শব্দের যে অংশকে আর কোনোভাবেই বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, তাকে বলা হয় প্রকৃতি।‘ অথবা, ভাষায় যার বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, এমন মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলে। শব্দ কিংবা পদ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি অপসারণ করলে প্রকৃতি অংশ পাওয়া যায়।

প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা:

  • (ক) ক্রিয়া-প্রকৃতি বা ধাতু,
  • (খ) নাম-প্রকৃতি বা সংজ্ঞা-প্রকৃতি।

(ক) ক্রিয়া-প্রকৃতি: প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাব-দ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায়, তা যদি অবস্থান, গতি বা অন্য কোনো প্রকারের ক্রিয়া বোঝায়, তাকে ক্রিয়া-প্রকৃতি বলে।

যেমন: চিল্, √পড়, রাখ, দৃিশ, কৃ প্রভৃতি ক্রিয়া-প্রকৃতি।

  • [চলন্ত = √চল্ (ক্রিয়া-প্রকৃতি) + অন্ত (প্রত্যয়)]

(খ) নাম-প্রকৃতি: প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাব-দ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায়, তা যদি কোনো দ্রব্য, জাতি, গুণ বা কোনো পদার্থকে বোঝায়, তাকে নাম-প্রকৃতি বলে। যেমন: মা, চাঁদ, গাছ, প্রভৃতি নাম-প্রকৃতি।

  • হাতল- হাত (নাম-প্রকৃতি) + অল (প্রত্যয়)

প্রাতিপদিক: বিভক্তিহীন নাম শব্দকে প্রাতিপদিক বলে। যেমন: হাত, বই, কলম, মাছ ইত্যাদি।

যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে, “ধাতু বা শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে যে বর্ণ বা বর্ণসমূহ যুক্ত হইয়া শব্দ প্রস্তুত হয়, তাহাদিগকে প্রত্যয় বলে।“যেমন:

  • হাত + আ = হাতা; মনু + অ = মানব; চিল্ + অন্ত চলন্ত; √কৃ+ অক = কারক।

এখানে, ‘আ’, ‘অ’, ‘অন্ত’, এবং ‘অক’-এগুলো প্রত্যয়। ‘হাত’, ‘মনু’ নাম-প্রকৃতি এবং চল্’, ‘কৃ’ ক্রিয়া প্রকৃতি।

প্রত্যয়:

যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে, “ধাতু বা শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে যে বর্ণ বা বর্ণসমূহ যুক্ত হইয়া শব্দ প্রস্তুত হয়, তাহাদিগকে প্রত্যয় বলে।“যেমন:

  • হাত + আ = হাতা; মনু + অ = মানব; চিল্ + অন্ত চলন্ত; √কৃ+ অক = কারক।

এখানে, ‘আ’, ‘অ’, ‘অন্ত’, এবং ‘অক’-এগুলো প্রত্যয়। ‘হাত’, ‘মনু’ নাম-প্রকৃতি এবং চল্’, ‘কৃ’ ক্রিয়া প্রকৃতি।

প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ:

প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার। যথা:

  • ১. কৃৎ প্রত্যয় ও
  • ২. তদ্ধিত প্রত্যয়।

কৃৎ প্রত্যয়: ধাতুর পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।

যেমন:

  • √ধর্ + আ = ধরা।
  • √ডুব্‌ + উরী = ডুবুরী।
  • √দৃশ্ + য = দৃশ্য ইত্যাদি।

তদ্ধিত প্রত্যয়: শব্দের পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।

যেমন:

  • বাঘ + আ = বাঘা।
  • সোনা + আলি = সোনালি।

সপ্তাহ + ইক = সাপ্তাহিক ইত্যাদি।

কৃৎ প্রত্যয় এবং তদ্ধিত প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ:

কৃৎ প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা:

  • ক. সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় ও
  • খ. বাংলা কৃৎ প্রত্যয়।

তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার। যথা:

  • ক. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়;
  • খ. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় ও
  • গ. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়।

ক. সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়: সংস্কৃত নিয়মানুযায়ী ঐ ভাষার ধাতুর সঙ্গে যেসব সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাদের সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন: √কৃ+তব্য কর্তব্য; দৃশ্ + অন = দর্শন ইত্যাদি।

খ. বাংলা কৃৎ প্রত্যয়: সংস্কৃত বা তৎসম ধাতু বিবর্জিত বাংলা ধাতুর সঙ্গে প্রাকৃত ভাষা থেকে আগত যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাদের বাংলা কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন: নাচ্ + অন = নাচন; ডুব্‌ + অন্ত = ডুবন্ত ইত্যাদি।

তদ্ধিত প্রত্যয়

ক. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়: যে তদ্ধিত প্রত্যয় সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: মনু + ষ্ণ = মানব; লোক + ষ্ণিক = লৌকিক ইত্যাদি।

খ. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়: বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত ও বিদেশি প্রত্যয় ব্যতীত বাকি প্রত্যয়গুলোকে বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: বাঘ + আ = বাঘা; ঘর + আমি = ঘরামি ইত্যাদি ।

গ. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়: শব্দের শেষে যেসব বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদের বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন: ডাক্তার + খানা = ডাক্তারখানা, ধড়ি বাজ = ধড়িবাজ ইত্যাদি।

ক. সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন

১. অ (অচ্)

  • √পঠ + অ = পাঠ।
  • √জি + অ = জয়।

২. অনীয় (অনীয়র)

  • √কৃ + অনীয় = করণীয়।
  • √পা + অনীয় = পানীয়।
  • √স্মৃ + অনীয় = স্মরণীয়।
  • √দৃশ্ + অনীয় = দর্শনীয়।

৩. তি (ভি)

  • √কৃ + তি = কৃতি।
  • √কৃত্ + তি = কীর্তি।
  • √কৃষ + তি = কৃষ্টি।
  • √দৃশ্ + তি = দৃষ্টি।

৪. অনট (অন)

  • √নী+অনট > নে+অন* = নয়ন
  • √শ্রু+অনট = শ্রবণ*
  • √স্থা+অনট = স্থান

৫. ক্ত (ত)

  • √জ্ঞা+ক্ত = জ্ঞাত
  • √খ্যা+ক্ত = খ্যাত
  • √পঠ+ক্ত = পঠিত
  • √লিখ+ক্ত = লিখিত

৬. ক্তি (তি)

  • √শ্রম+ক্তি = শ্রান্তি
  • √শম+ক্তি = শান্তি
  • √বচ+ক্তি = উক্তি
  • √মুচ+ক্তি = মুক্তি

৭. ঘ্যণ (য-ফলা)

  • √কৃ+ঘ্যণ = কার্য্য > কার্য
  • √ধূ+ঘ্যণ = ধার্য
  • √বাচ+ঘ্যণ = বাচ্য
  • √ভোজ+ঘ্যণ = ভোজ্য

৮. ণিন(ইন>ঈ-কার)

  • √গ্রহ+ণিন = গ্রাহী
  • √পা+ণিন = পায়ী
  • √কৃ+ণিন = কারী

৯. অল (অ)

  • √জি+অল = জয়
  • √ক্ষি+অল = ক্ষয়
  • √নিচ+অল = নিচয়

১০. বর

  • √ঈশ+বর = ঈশ্বর
  • √ভাস+বর = ভাস্বর
  • √নিশু+বর = নশ্বর

১১. শানচ (আন/মান)

  • √দীপ+শানচ = দীপ্যমান
  • √চল+শানচ = চলমান
  • √বৃধ+শানচ = বর্ধমান

১২. ঘঞ (অ)

  • √বস+ঘঞ = বাস
  • √যুজ+ঘঞ = যোগ
  • √ক্রুধ-ঘঞ = ক্রোধ

খ. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন

  • ১. অ (ষ্ণ, অণ) মনু + অ = মানব। দনু + অ = দানব। মধু + অ = মাধব।
  • ২. আয়ন (ষ্ণায়ন, ফক্) নর আয়ন নারায়ণ। দ্বীপ আয়ন দ্বৈপায়ন। রাম আয়ন = রামায়ণ।
  • ৩. ইক (ষ্ণিক, ঠক্) অক্ষর ইক = আক্ষরিক। ইতিহাস ইক= ঐতিহাসিক। বর্ষ ইক বার্ষিক।
  • ৪. ঈ (ইন, ইনী)সুখ+ঈ= সুখী। হস্ত+ঈ= হস্তী। ধন + ঈ = ধনী।
  • ৫. ঈয় (ষ্ণীয়, ছ) জল + ঈয় = জলীয়। আত্মন্ + ঈয় আত্মীয়। মানব ঈয় মানবীয়। রাষ্ট্র ঈয় রাষ্ট্রীয়।
  • ৬. ত্ব- মাতৃ + ত্ব মাতৃত্ব। মনুষ্যত্ব মনুষ্যত্ব। ভ্রাতৃত্ব ভ্রাতৃত্ব।
  • ৭. বান (বতুপ) রূপ বান রূপবান। ধন বান ধনবান। জ্ঞান+ বান = জ্ঞানবান।
  • ৮. মান্ (মৎ, মতুপ) বুদ্ধিমান্ বুদ্ধিমান।

প্রত্যয় কি?

শব্দ ও ধাতুর পরে অর্থহীন যেসব শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, সেগুলোকে প্রত্যয় বলে। যেমন পঠ + অক= পাঠক; দিন + ইক= দৈনিক; দুল্ + অনা=দোলনা; কৃ + তব্য=কর্তব্য।

তদ্ধিত প্রত্যয়

  • শব্দের পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলোকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
  • তদ্ধিত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে বলে তদ্ধিতান্ত শব্দ।
  • উপরের উদাহরণে, ‘অক’ ও ‘ইক’ তদ্ধিত প্রত্যয় এবং ‘শিক্ষক’ ও ‘দৈনিক’ হলো তদ্ধিতান্ত শব্দ।

কৃৎপ্রত্যয়

  • অন্যদিকে ধাতুর পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলোকে কৃৎপ্রত্যয় বলে।
  • কৃৎপ্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে বলে কৃদন্ত শব্দ।
  • উপরের উদাহরণে, ‘অনা’ ও ‘তব্য’ হলো কৃৎপ্রত্যয় এবং ‘দোলনা’ ও ‘কর্তব্য’ হলো কৃদন্ত শব্দ।
  • প্রত্যয়ের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই।
  • তবে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার পরে অনেক সময়ে শব্দের অর্থ ও শ্রেণিপরিচয় বদলে যায়।

নিচে প্রত্যয় দিয়ে গঠিত শব্দের উদাহরণ দেওয়া হলো:

প্রত্যয়শব্দ গঠনসাধিত শব্দপ্রত্যয়ের ধরণ
-অশিশু+অশৈশবতদ্ধিত
-অজি+অজয়কৃৎ
-অকপ+অকপাঠককৃৎ
-অকনিন্দ্+অকনিন্দককৃৎ
-অটদাপ+অটদাপটতদ্ধিত
-অটকপ্+অটকপটকৃৎ
-অনাদুল্+অনাদোলনাকৃৎ
-অনাখেল্+অনাখেলনাকৃৎ
-অনীয়মান্+অনীয়মাননীয়কৃৎ
-অনীয়দৃশ্+অনীয়দর্শনীয়কৃৎ
-অন্তউ+অন্তউড়ন্তকৃৎ
-অন্তমহ্+অন্তমহন্তকৃৎ
-অমকর্+অমকর্দমকৃৎ
-অমচর্+অমচরমকৃৎ
-আবাঘ+আবাঘাতদ্ধিত
-আপড়্+আপড়াকৃৎ
-আইঢাকা+আইঢাকাইতদ্ধিত
-আইসিল্+আইসেলাইকৃৎ
-আওঘির্+আওঘেরাওকৃৎ
-আওপাকড়্+আওপাকড়াওকৃৎ
-আনগাড়ি+আনগাড়োয়ানতদ্ধিত
-আনশী+আনশয়ানকৃৎ
-আনাবিবি+আনাবিবিয়ানাতদ্ধিত
-আনামুনশি+আনামুনশিয়ানাতদ্ধিত
-আনিবাবু+আনিবাবুয়ানিতদ্ধিত
-আনিশুন্‌+আনিশুনানিকৃৎ
-আনোবেত+আনোবেতানোতদ্ধিত
-আনোচাল্+আনোচালানোকৃৎ
-আমিপাগল+আমিপাগলামিতদ্ধিত
-আমিছেলে+আমিছেলেমিতদ্ধিত
-আরিভিখ+আরিভিখারিতদ্ধিত
-আরিধুন+আরিধুনারিতদ্ধিত
-আরুবোমা+আরুবোমারুতদ্ধিত
-আরুখোঁজ্+আরুখোঁজারুকৃৎ
-আলঘাট্+আলঘাটালতদ্ধিত
-আলমাত্+আলমাতালকৃৎ
-আলোজমক+আলোজমকালোতদ্ধিত
-আলোরস+আলোরসালোতদ্ধিত
-ইচাষ+ইচাষিতদ্ধিত
-ইভাজ্+ইভাজিকৃৎ
-ইকদিন+ইকদৈনিকতদ্ধিত
-ইকচরিত্র+ইকচারিত্রিকতদ্ধিত
-ইতকণ্টক+ইতকণ্টকিততদ্ধিত
-ইতপঠ+ইতপঠিতকৃৎ
-ইমানীল+ইমানীলিমাতদ্ধিত
-ইমাগুরু+ইমাগরিমাতদ্ধিত
-ইয়াজাল+ইয়াজালিয়া>জেলেতদ্ধিত
-ইয়াগা+ইয়াগাইয়া>গাইয়েকৃৎ
-ইলপঙ্ক+ইলপঙ্কিলতদ্ধিত
-ইলসল্+ইলসলিলকৃৎ
-ইষ্ণুচল্+ইষ্ণুচলিষ্ণুকৃৎ
-ইষ্ণুসহ্+ইষ্ণুসহিষ্ণুকৃৎ
-ঈ (প্রাণ+ঈপ্রাণীতদ্ধিত
-ঈ (ইস্থা+ঈস্থায়ীকৃৎ
-ঈনর+ঈনারীতদ্ধিত
-ঈছাত্র+ঈছাত্রীতদ্ধিত
-ঈনগ্রাম+ঈনগ্রামীণতদ্ধিত
-ঈনসর্বজন+ঈনসর্বজনীনতদ্ধিত
-ঈয়রাষ্ট্র+ঈয়রাষ্ট্রীয়তদ্ধিত
-ঈয়মিশর+ঈয়মিশরীয়তদ্ধিত
-উঢাল+উঢালুতদ্ধিত
-উঝাড়্+উঝাড়ুকৃৎ
-উকপেট+উকপেটুকতদ্ধিত
-উকমিশ্+উকমিশুককৃৎ
-উড়গর+উড়গরুড়তদ্ধিত
-উড়লেজ+উড়লেজুড়তদ্ধিত
-উয়ামাছ+উয়ামাছুয়াতদ্ধিত
-উয়াপড়ু+উয়াপড়ুয়াকৃৎ
-ওয়াঘর+ওয়াঘরোয়াতদ্ধিত
-ওয়ালাগ্‌+ওয়ালাগোয়াকৃৎ
-ওয়ালাবাড়ি+ওয়ালাবাড়িওয়ালাতদ্ধিত
-ওয়ালারিকশা+ওয়ালারিকশাওয়ালাতদ্ধিত
-কফলা+কফলকতদ্ধিত
-কচড়্+কচড়ককৃৎ
-করবাজি+করবাজিকরতদ্ধিত
-করকারি+করকারিকরতদ্ধিত
-খানাছাপা+খানাছাপাখানাতদ্ধিত
-খানাডাক্তার+খানাডাক্তারখানাতদ্ধিত
-ড়াগাছ+ড়াগাছড়াতদ্ধিত
-ড়াচাম+ড়াচামড়াতদ্ধিত
-তমুচ্+তমুক্তকৃৎ
-তজ্ঞা+তজ্ঞাতকৃৎ
-তব্যকৃ+তব্যকর্তব্যকৃৎ
-তব্যদা+তব্যদাতব্যকৃৎ
-তমআশি+তমআশিতমতদ্ধিত
-তমদীর্ঘতমদীর্ঘতমতদ্ধিত
-তরএমন+তরএমনতরতদ্ধিত
-তরঅশ্ব+তরঅশ্বতরতদ্ধিত
-তাশত্রু+তাশত্রুতাতদ্ধিত
-তাবহ্+তাবহতাকৃৎ
-তিচাক+তিচাকতিতদ্ধিত
-তিকাট্+তিকাটতিকৃৎ
-ত্বকবি+ত্বকবিত্বতদ্ধিত
-ত্বসতী+ত্বসতীত্বতদ্ধিত
-ত্রছদ্+ত্রছত্রকৃৎ
-ত্রনী+ত্রনত্রকৃৎ
-থচতুর্+থচতুর্থতদ্ধিত
-থকাশ+থকষ্ঠকৃৎ
-দারঅংশী+দারঅংশীদারতদ্ধিত
-দারচুড়ি-দারচুড়িদারতদ্ধিত
-ননাতি+ননাতিনতদ্ধিত
-বাজধান্দা+বাজধান্দাবাজতদ্ধিত
-বাজধোঁকা+বাজধোঁকাবাজতদ্ধিত
-বানদয়া+বানদয়াবানতদ্ধিত
-বানজ্ঞান+বানজ্ঞানবানতদ্ধিত
-মানবুদ্ধি+মানবুদ্ধিমানতদ্ধিত
-মানবৃধ+মানবর্ধমানকৃৎ
-সসুন্দর+যসৌনদর্যতদ্ধিত
-যকৃ+যকার্যকৃৎ
-রমধু+রমধুরতদ্ধিত
-রনম্+রনম্রকৃৎ
-লদীঘ+লদীঘলতদ্ধিত
-লঅম্+লঅমলকৃৎ
-লামেঘ+লামেঘলাতদ্ধিত
-লাহাম্+লাহামলাকৃৎ
-সইমানান+সইমানানসইতদ্ধিত
-সইচলন+সইচলনসইতদ্ধিত
-সেপানি+সেপানসেতদ্ধিত
-সেফিকা+সেফ্যাকাসেতদ্ধিত

প্রত্যয় যোগ করলে শব্দের অর্থ অনেক সময়ে বদলে যায়, যেমন

  • অবজ্ঞা অর্থে: চোর চোরা;
  • বৃহৎ অর্থে: ডিঙি ডিঙা;
  • সদৃশ অর্থে: বাঘ বাঘা;
  • আগত অর্থে: দখিন দখিনা;
  • আদর অর্থে: কানু কানাই;
  • ভাব অর্থে: বাহাদুর বাহাদুরি,
  • জাত অর্থে: ঢাকা ঢাকাই;
  • ভাব অর্থে: ইতর ইতরামি;
  • নিন্দা অর্থে: জেঠা- জেঠামি,
  • মালিক অর্থে: জমিদার জমিদারি,
  • পেশা অর্থে: ডাক্তার ডাক্তারি,

সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন (√) দাও।

১. ধাতুর পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয় তাদের কী বলে?

  • ক. কৃৎ প্রত্যয়
  • খ. তদ্ধিত প্রত্যয়
  • গ. কৃদন্ত পদ
  • ঘ. তদ্ধিতান্ত পদ

> সঠিক উত্তর: ক

২. তদ্ধিত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে কী বলে?

  • ক. প্রত্যয়
  • খ. প্রকৃতি
  • গ. মৌলিক শব্দ
  • ঘ. তদ্ধিতান্ত শব্দ
]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%93-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be/feed/ 0
ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা https://bpbangla.com/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%96/ https://bpbangla.com/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%96/#respond Sat, 16 Mar 2024 06:09:33 +0000 https://bpbangla.com/?p=734
শাখাউপ-শাখাপ্রধান অঞ্চলবিশ্বাস/অভ্যাস
সুন্নি ইসলাম (ইসলামের বৃহত্তম শাখা সুন্নি। এর অসংখ্য উপশাখা রয়েছে।)হানাফীদক্ষিণ এশিয়াবেরেলভি বা বালাকোটি সুন্নিগণ শুরুতে ওহাবি মতবাদের অনুসারি হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ইসলামি ব্যক্তিত্বকে, যেমন মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরেলভি, মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী প্রভৃতি মৌলবিকে আল্লাহর মতো আলিমুল গায়েব বা অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানী বলে বিবেচনা করে এবং এদেরই আদেশ-নির্দেশের অন্ধ অনুকরণ করতে থাকে। এরা বিখ্যাত ‘দারুল হারব’ তত্ত্বের স্রষ্টা। দেওবন্দিগণ ও আহলে হাদিসগণ এদেরকে কাফের হিশেবে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি এদের সাথে মেলামেশা করা কিংবা সৌহার্দ্র প্রকাশের বিরুদ্ধেও ফতোয়া জারি করেছে।
মাওলানা কাসেম নানতুবি আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় ভারতের উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসা থেকে যে ইসলামের জন্ম হয়, তা ‘দেওবন্দি ইসলাম’ নামে পরিচিত। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্বওমি মাদ্রাসা এদের নেতৃত্ব মেনে চলে। এদেশে জঙ্গিবাদ মূলত এদের হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে।
ইলিয়াসি তাবলিগ জামাত চিল্লার দ্বারা প্রচারকেই ইসলামের মূল লক্ষ্য বলে মনে করে। এরা ছয় উশুলে আস্থা রাখে এবং বলে যে, ভালো করে দোয়া-দরুদ পাঠ, নামাজ-রোজা পালন ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়াই মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় কাজ।
মওদুদি জামাত রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা দখলকে ভাবে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের দেশের জামাতে ইসলামির কর্মকাণ্ড হচ্ছে মওদুদি জামাতের চিন্তাধারার স্পষ্ট প্রতিফলন। এরা নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব-যাকাতকে সাধারন ট্রেনিং কোর্স মনে করে, যা মূলত ঈমানকে মজবুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সহায়ক হয়। অন্যান্য অনেক সুন্নি এদের পেছনে নামাজ আদায় করাকে মাকরুহে তাহরিমি বলে ঘোষণা দিয়েছে।
শাফিঈফিলিস্তিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জর্ডান ইত্যাদি।এরা হানাফিদের থেকে ভিন্ন ভাবে নামাজ-রোজা পালন করে থাকে। শাফেয়ি ও হানাফি মাযহাবের রক্তাক্ত দ্বন্দ্বে ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ।এদের মতে, বিয়ের সময় অভিভাবককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে, নিজের মেয়েকেও হাত দিয়ে স্পর্শ করলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, দাড়ি কেটে ফেলা জায়েজ ইত্যাদি।
মালিকিউত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইত্যাদিএরাও অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো করে ধর্ম-কর্ম পালন করে। এদের মতে, একজনের হজ্জ অন্যজন প্রক্সি দিতে পারবে না, দীর্ঘশ্বাস ফেললে নামাজ ভেঙ্গে যাবে, কাকের মাংস খাওয়া জায়েজ, মিসওয়াক করা জায়েজ নয়, শুক্রবারে রোজা রাখতে হবে ইত্যাদি।
হাম্বলিসৌদি আরব, কাতার, কিছু সিরিয়া ও ইরাকেঅন্যদের মতো এদেরও নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। এদের মতে, ওজু নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ হলে বা মাংস খেলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, সামান্যতম রক্ত বের হলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে, নগদ টাকায় যাকাত দেয়া যাবে না, এজিদ ছিল ন্যায়ের পক্ষে ও ইমাম হোসাইন ছিল অন্যায়ের পক্ষ
ওহাবী বা সালাফীসৌদি রাজপরিবারএরা কোরান-হাদিস ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রথম দিকের আলেমগণ তথা সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের অনুসরন করে। এরা সুফিবাদের সম্পূর্ণ বিরোধী। এরা আল্লাহকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সহকারে সশরীরে অস্তিত্বশীল বলে মনে করে, যিনি আকাশের অনেক উপরে অবস্থান করছেন। মুহাম্মদের জন্মদিন পালন করা, তার বিষয়ে কোন স্মরণসভার আয়োজন করা কিংবা তার কবর জেয়ারত করাকে এরা শিরক ও হারাম মনে করে। মক্কা ও মদিনার সকল সাহাবার কবর ভেঙ্গেচুরে এরা সমতল করে দিয়েছে। অতিরিক্ত প্রতিটি ধর্মীয় কাজকেই এরা ভাবে বিদ’আত। তারা নবীগণকেও নিষ্পাপ বলে মনে করে না।
আহলে হাদিসভারতীয় উপমহাদেশেরএরা সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন মাযহাব অনুসরন করে না। মাযহাব অনুসরন করাকে এরা শিরক বা অমার্জনীয় অপরাধ হিশেবে চিহ্নিত করে থাকে। অর্থাৎ, এদের চোখে হানাফি-মালেকি-শাফেয়ি-হাম্বলিগণ মুশরিক। এরা মনে করে, যারা নামাজ পড়ে না, তারা কাফির এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। দেওবন্দি ও বেরেলভি আলেমগণ এদেরকে কাফের ঘোষণা করেছে।
জাহিরিসুদান, মরক্কো ও পাকিস্তানআগে অনেক মানুষ এর অনুসারী ছিল। এখন দিনে দিনে এটি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এদের সাথে আহলে হাদিস মতাদর্শের অনেক মিল পরিলক্ষিত হয়।
শিয়া ইসলাম (ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা শিয়া। শিয়া-সুন্নির মারাত্নক সংঘাতই মধ্যপ্রাচ্যকে এখন বানিয়ে ফেলেছে নোংড়া বেহেশত। এতে করে কতো মানুষের প্রাণ যে ঝরে গেছে, কে জানে? শিয়াদের মধ্যেও রয়েছে অনেকগুলো উপশাখা। চিন্তাভাবনা ও কর্মপদ্ধতির দিক থেকে এই উপশাখাগুলোও পরস্পর থেকে আলাদা।)ইশনা আশারিয়াহইরাক, ইরান, আজারবাইজান, লেবানন ইত্যাদি।এদের ধারনা, মুহম্মদের মৃত্যুর পর হযরত আলী হচ্ছেন মুসলমানদের বৈধ নেতা বা ইমাম। সাহাবাগণ হযরত আলীকে ইমাম না বানিয়ে আবু বকর-ওমর-উসমানকে খলিফা বানিয়েছে, যা আল্লাহর আদেশের সরাসরি লঙ্ঘন। তারা অধিকাংশ সাহাবিকে মুনাফিক মনে করে এবং খুতবায় নিয়মিত গালিগালাজ করে। তারা বিশ্বাস করে বারো ইমামতে, যা মুহম্মদ থেকে শুরু করে আলীর বংশধর ইমাম মাহদির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই ইমামগণের মর্যাদা নবী-রাসুলদের চেয়ে বেশী।
ইশনা আশারিয়াদের কিছু কর্মকাণ্ড অদ্ভূত। এরা মুতা বিবাহ বা পতিতাবৃত্তিকে জায়েজ মনে করে, তিনবারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, হজ্জ্বের চেয়ে হযরত আলীর মাজার দর্শনকে অধিক পূণ্যের বলে বিবেচনা করে। এদের নিজস্ব হাদিস আছে। বোখারি, মুসলিম প্রমুখ হাদিসগ্রন্থে এরা আস্থা রাখে না।
জায়দিয়াহইয়েমেনবহুল আলোচিত হুথিগণ এদের মধ্যে অন্যতম। শিয়াদের মধ্যে এরা সবচেয়ে প্রাচীন। আগে এদের রমরমা অবস্থা থাকলেও ১৯৬২ সালে ইমামত লোপের পরে তারা বেকায়দায় পড়েছে। অনেক শতাব্দী আগে ইমাম নির্বাচনের প্রশ্নে মতানৈক্য হওয়ায় অন্য একদল শিয়া আলাদা হয়ে ইশনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে। এরা বিশ্বাস করে মুহাম্মদ আল বাকিরের ইমামতে, আর জাইদিয়া শিয়াগণ জাইদ ইবনে আলীর ইমামতে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এরা ইমাম হোসাইন পর্যন্ত আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে, তারপরের ইমামগণের স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে না।
ইসমাইলিভারত, চীন, মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, ইত্যাদিএরা বলে, ইসলামের সপ্তম ইমাম হচ্ছেন ইসমাঈল ইবনে জাফর। অন্যদিকে জাফরিয়া শিয়াগণ বলে, সপ্তম ইমাম মুসা ইবনে কাজিম। এত্থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে শিয়াদের এই নতুন উপশাখা যাত্রা শুরু করে।
এদের বিশ্বাস হলো, আধ্যাত্নিকতা নবী মুহাম্মদ হতে হয়রত আলী এবং তার থেকে বংশানুক্রমে প্রবাহিত হতে হতে বর্তমান পর্যন্ত চলে এসেছে। এই স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতা এখন অবস্থান করছে তাদের বর্তমান ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানের শরীরে। আগা খান তাদের ৪৯তম ইমাম। কোন পাপ বা ভুল তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রতিটি ইসমাঈলিয়াকে তাদের আয়ের বারো ভাগের এক ভাগ ইমাম আগা খানের ভাণ্ডারে প্রদান করতে হয়। অধঃস্তনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে ফুলে-ফেপে ওঠা এই সম্পদশালী ব্যক্তিকে প্রায়ই খবরে দেখা যায়। বর্তমানে ঈসমাইলিয়া শিয়াগণ নিজারি, হাফিজি, তাইয়াবি প্রভৃতি বিভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
আলাভিসিরিয়া, তুরস্ক, কিছু সিরিয়া ও তুরস্কেএরা মূলত ইশনা আশারিয়া থেকে এসেছে। এরা মনে করে, আল্লাহ অনেকবার মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে আগমন করেছেন। এমনকি মুহাম্মদ, হযরত আলী ও সালমান ফার্সি’র বেশ ধরেও তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। অর্থাৎ মুহম্মদ, সালমান ফার্সি ও হযরত আলী ছিলেন মূলত আল্লাহ। তারা পূনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
আহমদিয়া ইসলাম (ইসলামের তৃতীয় বৃহত্তম শাখা আহমদিয়া। অনেকের কাছে এরা কাদিয়ানি নামে পরিচিত। প্রথমদিকে তারা হানাফিদের একটি উপশাখা ছিল। পরবর্তীতে হানাফিদের চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে এরা নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে। আমাদের উপমহাদেশে অসংখ্য আহমদিয়া মুসলমান বসবাস করে। এরাও মোটামুটি দু’ভাগে বিভক্ত।)আহমদিয়া আঞ্জুমান ইশাত ই ইসলামউপমহাদেশএদের মতে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি হচ্ছেন প্রতিশ্রুত মসিহ, ইমাম মাহদি ও যীশু খ্রিস্ট। তবে তিনি নবী নন। তারা মনে করে, যীশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ অবস্থা থেকে পালিয়ে এসে কাশ্মীরে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি এখানেই মারা যান। তার কবর কাশ্মীরের উয আসাফে। এখন তিনি বেহেশতে আছেন। নতুন যীশু যিনি এসেছেন, তিনি শেষ নবী মুহাম্মদের উম্মত। আর তিনি হচ্ছেন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি।
জামাতে আহমদিয়াউপমহাদেশএরা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে একজন নবী বলে দাবী করে। মুহাম্মদকেও এরা নবী বলে মানে, তবে শেষ নবী হিশেবে স্বীকার করে না। এরা বলে, মুহাম্মদ হচ্ছে পূর্নাঙ্গ নবী। তারপরে অনেক নবী এসেছেন, যারা পূর্ণাঙ্গ নবী নন। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি হচ্ছেন এমনি একজন নবী।
ইবাদিওমান, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায়ধারনা করা হয়, এরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খারেজিদের একটি শাখা। ইবাদিগণ খলিফা আবু বকর ও খলিফা উমরকে সঠিক বলে মানে। তবে অনেকক্ষেত্রে খলিফা আলী ও খলিফা উসমানের বিরোধিতা করে। শিয়াদের মতো এদের নিজস্ব ধর্মীয় নেতা বা ইমাম রয়েছে। এই ইমাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন। এদের মতে, আল্লাহ কখনো দেখা দেবেন না, বিচার দিবসেও না। কোরানকে এরা সৃষ্টগ্রন্থ মনে করে, আল্লাহর কথা বলে মনে করে না।
ইসলামের শাখাপ্রধান অঞ্চলবিশ্বাস/অভ্যাস
সুফিবাদবাংলাদেশধর্মীয় কর্মকাণ্ড একজন মুরিদ নেতাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। নামাজ, রোজা ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন সুফি আদেশের অনন্য নিয়ম রয়েছে। উদাহরণের মধ্যে রয়েছে শাহজালাল, চরমোনাই, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী।
আলেভিবাদতুরস্কযা পীর সুলতান আবদাল, হাজী বেকতাশ বেলি, ইউনুস এমরে, শাহ ইসমাইল, বারো ইমাম এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তি ব্যক্তিদের মরমী ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়। সুন্নি ইসলাম এবং উসুলী ত্বালাশিয়া ইসলাম থেকে পৃথক, আলেভিদের কোনো বাধ্যতামূলক ধর্মীয় নীতি নেই এবং শিক্ষাগুলো সুফি পন্থের মতো একজন আধ্যাত্মিক নেতার দ্বারা প্রেরিত হয়।
বেক্তাশিআলবেনিয়া, 
বুলগেরিয়া, 
গ্রীস, 
কসোভো, 
উত্তর মেসিডোনিয়া, 
তুরস্ক, অন্যান্য 
আলবেনিয়ান প্রবাসী (ইতালি, 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং 
তুর্কি প্রবাসী (জার্মানি, 
ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, 
বেলজিয়াম)
যা একটি ইসলামিক সুফি রহস্যবাদী আদেশ যা 13 শতকের অটোমান সাম্রাজ্যে উদ্ভূত হয়েছিল। 
সাধক হাজী বেকতাশ ভেলীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। বেকতাশিয়ান সম্প্রদায় বর্তমানে বাবা  মন্ডির নেতৃত্বে রয়েছে, তাদের অষ্টম বেকতাশি দেদেবাবা এবং আলবেনিয়ার  তিরানায় সদর দফতর।
বোরহানিয়াবাংলাদেশএকজন আধ্যাত্মিক নেতার প্রতি ভক্তির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করুন।
মেভলেভিতুরস্কযা একটি সুফি তরিকা। ১৩শ শতাব্দীর কবি, আইনবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী ও সুফি জালালউদ্দিন রুমির অনুসারীরা তার মৃত্যুর পর এই তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। ঈশ্বরের স্মরণ এবং আধ্যাত্মিক আনন্দের উপর জোর দিয়ে তাদের ঘূর্ণায়মান দরবেশ অনুষ্ঠানের জন্য পরিচিত।
বালাভিয়াবাংলাদেশঅনুগামীরা আধ্যাত্মিক নেতার নির্দিষ্ট আচার এবং শিক্ষাগুলি মেনে চলে।
চিশতিয়াদক্ষিণ এশিয়াপ্রেম, সহনশীলতা এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির উপর জোর দেওয়া, সামা (সঙ্গীতের সমাবেশ) এবং জিকর (ঈশ্বরের স্মরণ) মত অনুশীলনের সাথে।
রিফা’ইমধ্যপ্রাচ্যঈশ্বরের সাথে আধ্যাত্মিক মিলন অর্জনের জন্য নাচ এবং জপ সহ তাদের আনন্দদায়ক আচারের জন্য পরিচিত।
নক্সবন্দিমধ্য এশিয়া, ভারত, পাকিস্তানএকজন প্রভুর নির্দেশনায় কঠোর ইসলামী আইন এবং আধ্যাত্মিক অনুশাসন মেনে চলার উপর জোর দেয়।
নিয়ামতুল্লাহিইরানধ্যান এবং স্ব-শৃঙ্খলার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধিকরণ এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের দিকে মনোনিবেশ করুন।
কাদেরিয়ামধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়াআধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার গুরুত্ব এবং একজন আধ্যাত্মিক নেতার আনুগত্যের উপর জোর দেওয়া।
Bostamiyaবাংলাদেশঅনুসারীরা আধ্যাত্মিক নেতার নির্দেশনায় নির্দিষ্ট অনুশীলন এবং আচার-অনুষ্ঠানে নিযুক্ত হন।
সাধিলিল্লাবিভিন্নএকজন আধ্যাত্মিক গাইডের প্রতি ভক্তির মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনের উপর জোর দেয়।
মাইজভান্দিইরানঅনুশীলনের মধ্যে রয়েছে ধ্যান, প্রার্থনা এবং আধ্যাত্মিক গুরুর শিক্ষা মেনে চলা।
মোজাদ্দেদিয়াদক্ষিণ এশিয়াএকজন আধ্যাত্মিক নেতার শিক্ষা মেনে চলার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করুন।
গলন্ধরিয়ামধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়াএকজন আধ্যাত্মিক গুরুর নির্দেশনায় তপস্যা এবং আধ্যাত্মিক অনুশাসনের উপর জোর দেয়।
সোহরাওয়ার্দিয়ামধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়াএকজন সুফি ওস্তাদের আনুগত্যের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শুদ্ধিকরণ এবং জ্ঞানার্জনের উপর জোর দেওয়া।
ড্রুজলেবানন, সিরিয়া, ইসরাইলঅনন্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস, ঈশ্বরের একত্বের উপর জোর দেওয়া এবং আধ্যাত্মিক শ্রেণিবিন্যাসের গুরুত্ব সহ।
খারেজিঐতিহাসিকএকসময় বিদ্যমান ছিল কিন্তু এখন আর নেই, ধর্মীয় গ্রন্থের ব্যাখ্যায় ঐতিহ্যের চেয়ে যুক্তির গুরুত্বে বিশ্বাসী।
মুর্জিয়াঐতিহাসিকআগে বিদ্যমান ছিল কিন্তু এখন আর নেই, ধর্মীয় বিষয়ে যুক্তি ও বুদ্ধির কর্তৃত্বের উপর জোর দিয়েছে।
ইহা পরিবর্তন করুনঐতিহাসিকএকসময় প্রারম্ভিক ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে প্রভাবশালী, ধর্ম বোঝার ক্ষেত্রে যুক্তি ও স্বাধীন ইচ্ছার গুরুত্বের পক্ষে ছিলেন।
মুশাবিয়্যাহঐতিহাসিকআগে অস্তিত্ব ছিল কিন্তু এখন আর নেই, ঈশ্বরের গুণাবলীর নৃতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার উপর জোর দিয়েছে।
জাহমিয়াহঐতিহাসিকআগে প্রভাবশালী ছিল কিন্তু এখন অদৃশ্য হয়ে গেলেন, ঈশ্বর এবং কুরআনের প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের বিতর্কিত মতামতের জন্য পরিচিত।
জাররিয়াহঐতিহাসিকআগে অস্তিত্ব ছিল কিন্তু এখন নেই, তাদের চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি এবং জঙ্গি কর্মের জন্য পরিচিত।
নাজ্জারিয়াহঐতিহাসিকএকসময় অস্তিত্ব ছিল কিন্তু এখন আর নেই, ঈশ্বরের গুণাবলীর নৃতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার জন্য পরিচিত।
কালিয়াঐতিহাসিকআগে অস্তিত্ব ছিল কিন্তু এখন আর নেই, কুরআনের সৃষ্টিতে তাদের বিশ্বাসের জন্য পরিচিত।

এই সারণীটি বিভিন্ন শাখা, উপ-শাখা, প্রধান অঞ্চল এবং ইসলামের মূল বিশ্বাস/অভ্যাসগুলির একটি ওভারভিউ প্রদান করে, যার মধ্যে সুন্নি এবং শিয়া উভয় প্রধান শাখার পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায় এবং ঐতিহাসিক আন্দোলনগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%96/feed/ 0
বাংলা শব্দ গঠন পদ্ধতি | বাংলা ২য় পত্র ব্যাকরণ | একাদশ-দ্বাদশ | এইচএসসি (HSC) https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%a6-%e0%a6%97%e0%a6%a0%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82/ https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%a6-%e0%a6%97%e0%a6%a0%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82/#respond Fri, 15 Mar 2024 00:59:27 +0000 https://bpbangla.com/?p=721 শব্দ গঠন

অর্থপূর্ণ ধ্বনিসমষ্টিকে বলা হয় শব্দ। মনের ভাব প্রকাশের জন্য একাধিক ধ্বনি একত্র হয়ে কোনো অর্থ প্রকাশ করলে তবেই তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু শব্দের গঠন ও গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সামগ্রিকভাবে সবশ্রেণির শব্দগুলোকে চিহ্নিত করে এগোতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ-এ বাক্যে মুখ্যত ব্যাকরণগত ভূমিকা অনুযায়ী বাংলা শব্দের শ্রেণিবিন্যাকে আমলে নেয়া যায়। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে মোট আটটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

যেমন– ১. বিশেষ্য; ২. সর্বনাম; ৩. বিশেষণ; ৪. ক্রিয়া; ৫. ক্রিয়া-বিশেষণ; ৬. যোজক; ৭. অনুসর্গ ও ৮. আবেগ শব্দ।

এ আট প্রকার শব্দের গঠন প্রক্রিয়াগুলো দেখানোই আমাদের আলোচ্য বিষয় হতে পারে। তার আগে উপর্যুক্ত শব্দ শ্রেণিগুলোকে একটি শাখাচিত্রে উপস্থাপন করা যাক।

এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, এ শব্দশ্রেণি নির্ধারণ মূলত অর্থনির্ভর, যদিও রূপতত্ত্বের অন্যান্য মানদণ্ডও একই সঙ্গে লক্ষ করা হবে। এ ধরনের শ্রেণিবিভাগ কখনোই নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ হয় না, কারণ বাক্যে প্রতিবেশ বিশেষে অনেক শব্দের ভূমিকা পরিবর্তিত হতে পারে। ‘অর্থবাহী’ শব্দগুলোকে অর্থের প্রয়োজনেই বাক্যে ব্যবহার করা হয়। বাক্যের মূল সংবাদবস্তু এ শব্দগুলোতে বাহিত হয়। ব্যাকরণিক শব্দগুলোরও নিশ্চয়ই এক ধরনের অর্থ আছে। কিন্তু তাদের কাজ প্রধানত ব্যাকরণের। মনে রাখতে হবে, বাক্যে শব্দগুলোর একক কোনো ভূমিকা নেই, একক বা সম্মিলিতভাবে পদবন্ধ নির্মাণ করেই সেগুলো বাক্যের বৈধ উপাদান হয়ে ওঠে।

এবারে বিভিন্ন শ্রেণির শব্দের গঠন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা যাক। শব্দগঠন মানেই হলো সাধিত শব্দের গঠন প্রক্রিয়া। পৃথিবীর সকল ভাষার শব্দগঠনের উপায়গুলোকে নিচের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনে রূপগত উপায়গুলোই প্রধান। এগুলোতে শব্দমূলে সাধারণভাবে এক বা একাধিক রূপ যুক্ত হয়ে পূর্ণ শব্দ গঠন করে। কখনো কোনো প্রত্যয় যুক্ত হয়ে, কখনো বা আর-একাধিক পূর্ণ শব্দের যোগে সমাস প্রক্রিয়ায়।

১. বিশেষ্য গঠন

সাধিত বিশেষ্য নানাভাবে গঠিত হতে পারে। যেমন-

(ক) আদ্যপ্রত্যয় উপসর্গযোগে

যেহেতু উপসর্গও এক ধরনের আদ্যপ্রত্যয়, তাই উপসর্গযোগে গঠিত সব শব্দই আদ্যপ্রত্যয়জাত শব্দ। উদাহরণ:

. উপ + কূল = উপকূল- এরূপ – পরিষেবা/পরিসেবা, সংবিধান, প্রকৌশল ইত্যাদি। [বস্তুতপক্ষে বাংলায় যে কুড়িটি সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয় ব্যবহৃত হয় তাতে গঠিত শব্দগুলোর অধিকাংশই তৎসম শব্দ]

. শব্দের আগে একাধিক আদ্যপ্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। উদাহরণ: অন্ + অধি + কার (কৃ+অ)= অনধিকার;

অ + পরা + ভূত (ভূ+ক্ত) = অপরাভূত।

আদ্যপ্রত্যয় বা উপসর্গযোগে সমাস ও শব্দের অর্থ পরিবর্তন

উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠনের মূলত সমাস-প্রক্রিয়ায় শব্দের অর্থের নানারকম পরিবর্তন ঘটতে পারে।

পরিবর্তনের ধরনাগুলো হচ্ছেঃ

  • ১. শব্দের অর্থের প্রসার: পূর্ণ > পরিপূর্ণ
  • ২. শব্দের অর্থের সংকোচন: গ্রহ > উপগ্রহ
  • ৩. শব্দের অর্থের পরিবর্তন: মান > অপমান

[উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে]

আদ্যপ্রত্যয় বা উপসর্গের শ্রেণিবিভাগ

বাংলা আদ্যপ্রত্যয়গুলো হচ্ছে: অ-, অঘা, অজ, অনা-, আ-, আড়-, আন-, আব-, ইতি, উন- (উণা), কু-, নি-, পাতি-, ভর-, রাম, স-, সা-, হা-। শব্দগঠনের সময়ে এসব আদ্যপ্রত্যয়ের কোনো কোনোটি আলাদা আলাদা অর্থের দ্যোতনা দেয়। এখানে বাংলা আদ্যপ্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দগঠনের উদাহরণ দেখানো হলো:

আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
অ-নয় ও মন্দতাঅবাঙালি, অমিল, অকেজো
অঘা-বোকাঅঘারাম, অঘামূর্খ
অজ-নিতান্ত (মন্দ)অজপুকুর, অজমূর্খ
অনা-মন্দতা, অদ্ভুত, অভাবঅনাচার, অনামুখো, অনাসৃষ্টি, অনাবৃষ্টি
আ-অভাব, মন্দতাআধোয়া, আলুনি, আগাছা
আড়-বাঁকা, প্রায়আড়খ্যাপা, আড়পাগলা, আড়মোড়া
আন-নয়, বিক্ষিপ্তআনকোরা, আনচান, আনমনা
আব-অস্পষ্টতাআবছায়া, আবডাল
ইতি-এ বা এরইতিকর্তব্য, ইতিপূর্বে
উন-কমঊনপাঁজুরে
কু-মন্দতাকুকাজ, কুকথা, কুনজর
নি-নাই, নেতিনিখুঁত, নিখরচা, নিখাদ
পানি-ক্ষুদ্রপাতিলেবু, পাতিহাঁস
ভর-পূর্ণভরদুপুর, ভরপেট, ভরসন্ধ্যে
রাম-বড়, উৎকৃষ্টরামছাগল, রামদা, রামচর
সা-উৎকৃষ্টসা-জিরা, সা-জোয়ান
হা-অভাবহাঘরে, হাপিত্যেশ, হাভাতে

বাংলায় সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয়যোগে শব্দগঠনের বহু উদাহরণ আছে। এখানে অর্থদ্যোতনাসহ সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দগঠনের উদাহরণ দেয়া গেল।

আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দসমূহ
পরাবিপরীত, আতিশষ্যপরাজয়, পরাভব, পরাশক্তি
অপবিপরীত, অপকর্ষ, দূরীকরণঅপকার, অপমান, অপসারণ
সম্ ~ [সং, সঙ, সঞ্চ, সন্]সন্নিবেশ, সম্যক, অভিমুখী, আতিশয্যসংকলন, সংযোজন, সংহতি, সমর্থন, সমাদর, সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ
নিআধিক্য, পুরাপুরি, নিচেনিপীড়ন, নিদারুণ, নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ, নিবিষ্ট, নিবারণ, নিপাত, নিক্ষেপ
অবনিম্নমুখিতা, মন্দ, সম্যকঅবতরণ, অবনতি, অবমাননা, অবক্ষয়, অবজ্ঞা
অনুপরে, নিরন্তরতা, অভিমুখী, সাদৃশ্যঅনুকরণ, অনুসরণ, অনুক্ষণ, অনুশীলন, অনুকূল, অনুলিপি
নিঃ ~ [নির, নিশ্, নিষ, নিস্]অভাব, বিশেষভাবে, বহির্মুখিতানিরক্ষর, নিরপরাধ, নিশ্চয়, নিষ্পন্ন
দুঃ ~ [দুর্,দুশ্, দুষ, দুস্]মন্দ, অভাব, কঠিন, আধিক্যদুঃসময়, দুর্নাম, দুশ্চিন্তা, দুষ্কার্য, দুস্তর
বিসম্যক, বিপরীত, ভিন্ন অভাবঅধিনায়ক, অধিপতি, অধিকার
অধিপ্রধান, মধ্যেসুকণ্ঠ, সুসংবাদ, সুতীব্র
সুভালো, সহজ, আতিশয্যসুকণ্ঠ, সুসংবাদ, সুতীব্র
উৎ ~ [উদ্, উন্‌]উপরের দিক, অপকর্ষ, আতিশয্যউত্তোলন, উন্নতি, উদ্বোধন
পারিচতুর্দিক, সম্পূর্ণভাবেপরিক্রমা, পরিতৃপ্ত, পরিত্যাগ
প্রতিবিপরীত, সাদৃশ্যপ্রতিদান, প্রতিচ্ছবি, প্রতিদিন, পৌণঃপুনিকতা
উপনিকট, অপ্রধান, সম্যকউপকূল, উপভাষা, উপভোগ
পর্যন্ত, ঈষৎআকণ্ঠ, আনত

অন্য ভাষার আদ্যপ্রত্যয়

আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে বেশি কিছু আদ্যপ্রত্যয় বাংলায় এসেছে। সেগুলোর কোনো কোনোটি মূল উচ্চারণে কোনো কোনোটি বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে অর্থদ্যোতনাসহ অন্যভাষার আদ্যপ্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দগঠনের কিছু উদাহরণ দেখানো হলো :

ক. ফারসি আদ্যপ্রত্যয়
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
কারকাজকারখানা, কারসাজি
খোশআনন্দদায়কখোশগল্প, খোশমেজাজ
দরকম, নিম্নস্থদরকাঁচা, দরদালান, দরপাট্টা
নানয়নাচার, নারাজ, নাপাক
নিমঅবি বা প্রায়নিমখন, নিমরাজি
ফিপ্রত্যেকফি-বছর, ফি-হপ্তা
সহ বা সঙ্গেবমাল, বকলম
বদমন্দ, উগ্রবদখেয়াল, বদনাম, বদমেজাজ
বেনেই, খারাপ, ভিন্নবেআদব, বেআক্কেল, বেহুঁশ
খ. আরবি
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
আমসর্বসাধারণআমদরবার, আমজনতা, আমরাস্তা
খাসব্যক্তিগতখাসকামরা, খাসমহল, খাসদখল
লানা (নেই, ভুল)লাওয়ারিশ, লাখেরাজ, লাপাত্তা
গরনা (নেই, ভুল)গরমিল, গরহাজির, গররাজি
গ. ইংরিজি উপসর্গ
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
আমসর্বসাধারণআমদরবার, আমজনতা, আমরাস্তা
খাসব্যক্তিগতখাসকামরা, খাসমহল, খাসদখল
লানা (নেই, ভুল)লাওয়ারিশ, লাখেরাজ, লাপাত্তা
গরনা (নেই, ভুল)গরমিল, গরহাজির, গররাজি
ঘ. উর্দু-হিন্দি আদ্যপ্রত্যয়
আদ্যপ্রত্যয়অর্থদ্যোতনাগঠিত শব্দ
হারপ্রত্যেক, বিভিন্নহররোজ, হরকিসিম

(খ) অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে শব্দগঠন

অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে বিশেষ্য শব্দগঠনের প্রক্রিয়া দু ধরনের:

  • ১. ধাতুর সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে।
  • ২. বিশেষ্যের/শব্দের সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে।

১. ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য গঠন

ধাতুর সঙ্গে দুধরনের অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠিত হয়।

  • ক. সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে
  • খ. বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে।
ক. ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে বিশেষ গঠন:
ক্রিয়ামূলসংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়
অকপাঠ + অক = পাঠক
অকগায় + অক = গায়ক
অকগ্রাহ + অক = গ্রাহক
অনজ্বল + অন = জ্বলন
অনগম + অন = গমন
অনশয় + অন = শয়ন
তাদা + তা = দাতা
তাগ্রহ + তা = গ্রহীতা
তাবক + তা = বক্তা
তিদীপ্ত + তি = দীপ্তি
তিকৃত + তি = কৃতি
তিভীত + তি = ভীতি
বরভাস্বর + বর = ভাস্বর
বরঈশ্বর + বর = ঈশ্বর
বরযাযা + বর = যাযাবর

এ প্রক্রিয়া মূলত সংস্কৃত রূপতত্ত্বের অংশ।

খ. ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠন :
ক্রিয়ামূলবাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়
অক, অকাচড়ক, মোড়ক, ঝলক, হলকা, ছিলকা
অতমানত, ফেরত, বসত
অতা, অতি, তা, তিপড়তা, গুনতি, ভরতি, পড়তি
অন্ফোড়ন, ফলন, ঝাড়ন
অনাবাজনা, খেলনা, বাটনা
অনি/ওনিনাচনি, ঢাকনি, চালনি
উনিনাচুনি, ছাউনি, চিরুনি
অলপিতল, পিছল, ফাটল
আ/ওয়াশোনা, দেখা, যাওয়া, খাওয়া
আইঢালাই, বাছাই, লড়াই
আত্(<আইত)স্যাঙাতা, ডাকাত
আওচড়াও, ফলাও, ঘেরাও
আনোদেখানো, শোনানো, ভাবানো
আরি/উরিকাটারি, পূজারি, ডুবুরি
হাসি, কাশি, ঝুলি
মোড়ক, টনক, চড়ক
কা/কিকৌচকা, টপকা, ফসকা
কিটুসকি, ভরকি, মুড়কি

২. বিশেষ্যের সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে সাধিত বিশেষ্য গঠন

বিশেষ্যের সঙ্গে যেসব অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য গঠিত হয় সেগুলোকে তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয় বলা চলে।

সংস্কৃতি তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠন:
সংস্কৃতি অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষ্য
অকবালক, সার্থক, শিক্ষক
আয়নদ্বৈপায়ন, বাৎস্যায়ন
রাবণি, দাশরথি
ইকগ্রন্থাগারিক, নাবিক, সাংবাদিক
ইমাকালিমা, নীলিমা, মধুরিমা
ছত্রক, পঞ্চম, পুত্রক
তাএকতা, দরিদ্রতা, শত্রুতা
ত্বকর্তৃত্ব, নেতৃত্ব, দায়িত্ব

এগুলো সংস্কৃতি ব্যাকরণ প্রক্রিয়ার অংশ, বাংলা রূপতত্ত্বের অন্তর্গত নয়।

বাংলা তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষ্য গঠন:
অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষ্য
থালা, চাকা
আইচড়াই, উতরাই, নিতাই
আচকানাচ, কোনাচ
আচিঘামাচি, ব্যাঙাচি
আতডাকাত, স্যাঙাত
আনিআমানি, নাকানি
আনোজুতানো, বেতানো, হাতানো
আমি/-আমোন্যাকামি/ন্যাকামো, পাগলামি/পাগলামো
আরকামার, চামার, কুমার
আরিকাঁসারি, ভিখারি, শাঁখারি
আল/আলোদাঁতাল/দাঁতালো, ধারাল/ধারালো
চুলি, তেলি, তাঁতি (বৃত্তিজীবী বা দক্ষ অর্থে)
ডাক্তারি, মাস্টারি, মোক্তারি (পেশা/বৃত্তি অর্থে)
কাঠি, ছুরি, ঘটি (ক্ষুদ্র অর্থে)
খুকু, ছোটু, মামু
এ (<ইয়া)জেলে, নেয়ে, মুটে
ঢোলক, দমক, বালক
মাথট, লেঙ্গট
টিছিপটি, সুখটি, শুখাটি
ড়ারাজড়া, খাগড়া, চামড়া
ড়িআঁকড়ি, জুয়াড়ি, ঝিউড়ি
নিকামরনি, গয়লানি, ডাক্তারনি
পনাগিন্নিপনা, দুরন্তপনা, বেহায়াপনা
অন্যান্য তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন:
অন্যান্য তদ্ধিত অন্ত্যপ্রত্যয়শব্দ উদাহরণ
আনা/আনিবাবুয়ানা/বাবুয়ানি, মুনশিয়ানা, সাহেবিয়ানা
ওয়ানগাড়োয়ান, কোচোয়ান, দারোয়ান
ওয়ালাফেরিওয়ালা, বাড়িওয়ালা, পয়সাওয়ালা
খানাছাপাখানা, ডাক্তারখানা, বৈঠকখানা
খোরগাঁজাখোর, ঘুষখোর, হারামখোর
গরকারিগর, বাজিগর, সওদাগর
গিরিকেরানিগিরি, দাদাগিরি, মাঝিগিরি
চা/চিবাগিচা, ডেকচি, ব্যাঙাচি
চিতবলচি, বাবুর্চি, মশালচি
দান/দানিআতরদান/ আতরদানি, ছাইদান/ছাইদানি
দারজমিদার, দোকানদার, পাহারাদার
-নবিসনকলনবিস, শিক্ষানবিস, হিসাবনবিস
বন্দিজবানবন্দি, নজরবন্দি, সারিবন্দি
বাজিগলাবাজি, ধোঁকাবাজি, বোমাবাজি
স্তানআফগানিস্তান, পাকিস্তান, হিন্দুস্তান

(গ) সমাসের সাহায্যে বিশেষ্য গঠন

দ্বন্দ্ব বা বন্ধন সমাসের সাহায্যে

  • ১. বিশেষ্য-বিশেষ্য শ্রেণির দ্বন্দ্ব সমাসের সাহায্যে: কাগজ-কলম, ফলমূল, বইপত্র।
  • ২. ক্রিয়া বিশেষ্য-ক্রিয়া বিশেষ্য শ্রেণির দ্বন্দ্ব সমাসের সাহায্যে: আসা-যাওয়া, ওঠা-বসা, খাওয়া-পরা।
  • ৩. বহুপদী দ্বন্দ্ব সমাসের সাহায্যে: কাঠ-খড়-কোরোসিন, তেল-নুন-লকড়ি, রোগ-শোক-জরা-মৃত্যু।

কর্মধারয় বা বর্ণন সমাসের সাহায্যে

  • ৪. সাধারণ কর্মধারয় বা বর্ণন সমাসের সাহায্যে: কাঁচকলা, আলুসিদ্ধ, ডাক্তার সাহেব।
  • ৫. উপমিত বর্ণন সমাসের সাহায্যে: চাঁদমুখ, চরণকমল, পুরুষসিংহ।
  • ৬. রূপক বর্ণন সমাসের সাহায্যে: জ্ঞানলোক, কালস্রোত, জীবনযুদ্ধ।
  • ৭. মধ্যপদলোপী বর্ণন সমাসের সাহায্যে: শিক্ষামন্ত্রী, জয়পতাকা, পরিচয়পত্র।

তৎপুরুষ বা কারকলোপী সমাসের সাহায্যে

  • ৮. কর্মতৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: চুক্তি সম্পাদন, নারী-নির্যাতন, পদত্যাগ।
  • ৯. নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: এতিমখানা, মালগুদাম, সভামঞ্চ।
  • ১০. সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: দেশসেবা, বিশ্বকবি, শয়নকক্ষ।
  • ১১. উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সাহায্যে: জলচর, নাট্যকার, জাদুকর।

বজ্রীহি বা অন্যার্থক সমাসের সাহায্যে

  • ১৩. ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাসের সাহায্যে: কাড়াকাড়ি, গলাগলি, মারামারি।

২. সর্বনাম গঠন

বাংলা ভাষার সর্বনামগুলোকে ভাষায় প্রাপ্ত বা সিদ্ধ শব্দ বলেই ধরে নেয়া ভালো। কিন্তু আমি, তুমি, তুই, আপনি, তিনি, ইনি, উনি-এ সিদ্ধ রূপগুলোর শেষে ‘ই’ ধ্বনিটি থাকায়, মনে হয় ‘ই’ একটি প্রত্যয় হিসেবে যুক্ত হয়ে এভাবে এ কর্তৃপদগুলো গঠন করেছে:

  • আম্ + ই = আমি
  • তোম্ + ই = তুমি
  • তো + ই = তুই
  • আপন + ই = আপনি
  • তেন + ই = তিনি
  • ওন + ই = উনি
  • এন্ + ই = ইনি

কোনো কোনো সর্বনাম গঠিত হয়েছে স্বরোচ্চতাসাম্য (স্বরসংগতি) ও ধ্বনিলোপের মাধ্যমে। যেমন:

  • তোম্ + ই > তুমি (স্বরোচ্চতাসাম্য)
  • আপন্ +ই > আপনি (ধ্বনিলোপ)

সর্বনামের একবচনের মূলের সঙ্গে ‘রা’ যুক্ত হয়ে বহুবচন হয়:

  • আম্ + রা = আমরা
  • তোম্ + রা = তোমরা
  • তো + রা = তোরা
  • আপন + রা = আপনারা

সম্বন্ধবাচক সর্বনাম গঠনে একবচনে ‘র’ ও বহুবচনে ‘দের’ যুক্ত হয়। তবে তার আগে মধ্যপ্রত্যয় ‘আ’ যুক্ত হয়ে সম্বন্ধবাচক সর্বনামের শব্দমূল তৈরি হয়। যেমন:

  • (আম্ + আ >) আমা- + র = আমার
  • আমা- + দের = আমাদের
  • (তোম্ + আ >) তোমা- + র = তোমার

৩. বিশেষণ গঠন

সাধিত বিশেষণ গঠিত হতে পারে। যেমন: আদ্যপ্রত্যয়, অন্ত্যপ্রত্যয়, সমাস ও সংখ্যা শব্দের সাহায্যে এবং ধ্বন্যাত্মক শব্দের ভিত্তিতে।

আদ্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন

বাংলা সাধিত বিশেষণ গঠনে তিন ধরনের আদ্যপ্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • ১. সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয়,
  • ২. বাংলা আদ্যপ্রত্যয়,
  • ৩. অন্যান্য আদ্যপ্রত্যয়।

১. সংস্কৃত আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ) যোগে বিশেষণ গঠন

আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ)বিশেষণ গঠন
উৎউৎকণ্ঠ, উত্তল, উত্তাল
দুঃদুরাত্মা, দুশ্চর, দুষ্কর
নিঃনিরক্ষর, নিশ্চিন্ত, নিষ্কর
বিবিচিত্র, বিকল, বিকল্প

২. বাংলা আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ) যোগে বিশেষণ গঠন

বাংলা আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ)বিশেষণ গঠন
ভরভরদুপুর, ভরপেট, ভরসন্ধ্যে
হাহাঘরে, হাভাতে

৩. অন্যান্য আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ) যোগে বিশেষণ গঠন

অন্যান্য আদ্যপ্রত্যয় (উপসর্গ)বিশেষণ
নানারাজ, নাখোশ, নাহক
বদবদনসিব, বদমেজাজি, বদরাগী
বেবেআদম, বেহিসেব, বেঠিক
লালাওয়ারিশ, লাজবাব

অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন

বাংলা সাধিত বিশেষণ গঠনে তিন ধরনের অন্ত্যপ্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • ১. সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়,
  • ২. বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়,
  • ৩. অন্যান্য অন্ত্যপ্রত্যয়।

সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় যোগে বিশেষণ গঠন

দুটি প্রক্রিয়ায় সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠিত হয়। যেমন:

  • ১. ধাতুর সঙ্গে
  • ২. শব্দের সঙ্গে।
ধাতুর সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় (কৃৎপ্রত্যয়) যোগে বিশেষণ গঠন
ধাতুর সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষণ
অনীয়করণীয়, নিন্দনীয়, শোচনীয়
ইতকুণ্ঠিত, চলিত, লিখিত
ইষ্ণচলিষ্ণু, ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু
বাদী (সত্যবাদী), কারী (উপকারী), স্থায়ী
জিজ্ঞাসু, লিঙ্গু, পিপাসু
জলজ, মনোজ, সহজ
খ্যাত, জ্ঞাত, মৃত
তব্যজ্ঞাতব্য, দাতব্য, দ্রষ্টব্য
মানদৃশ্যমান, চলমান, ম্রিয়মাণ
গণ্য, মান্য, যোগ্য
ভদ্র, ক্ষুদ্র, নম্র
শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয় (শব্দ প্রত্যয়) যোগে বিশেষণ গঠন
শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত অন্ত্যপ্রত্যয়বিশেষণ
ইকদৈহিক, ভৌগোলিক, ষান্মাসিক
ইতঅঙ্কুরিত, ক্ষুধিত, লজ্জিত
ইমঅগ্রিম, অন্তিম, রক্তিম
ইলজটিল, ফেনিল, পঙ্কিল
ইষ্ঠগরিষ্ঠ, লঘিষ্ঠ
ঈ (<ইন্‌)গুণী, ধনী, সাহসী
ঈনকুলীন, অভ্যন্তরীণ, সর্বজনীন
ঈয়জলীয়, কেন্দ্রীয়, রাষ্ট্রীয়
ঈয়সীগরীয়সী, ভূয়সী, বর্ষীয়সী
এয়গাঙ্গেয়, আগ্নেয়, আতিথেয়
তনপুরাতন, চিরন্তন, সনাতন
তমক্ষুদ্রতম, বৃহত্তম, বিংশতিতম
তরক্ষুদ্রতর, বৃহত্তর, প্রবলতর
বৎবন্ধুবৎ, মাতৃবৎ, শত্রুবৎ
বতীগুণবতী, দয়াবতী, রূপবতী
বান্জ্ঞানবান, ধনবান, বিবেকবান
বিধনানাবিধ, বহুবিধ, ত্রিবিধ
বী (< বিন্)তেজস্বী, মায়াবী, যশস্বী
পঞ্চম, সপ্তম, দশম
ময়জলময়, প্রীতিময়, বৈচিত্র্যময়
আদ্য, গ্রাম্য, ন্যায্য
মাংসল, শীতল, বহুল

এগুলো মূলত সংস্কৃত ব্যাকরণেই গঠিত হয়েছে। বাংলায় এগুলো গোটা শব্দরূপেই গৃহীত। ব্যুৎপত্তি জানার জন্য আমাদের সংস্কৃত ব্যাকরণেরই দ্বারস্থ হতে হয়।

বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন

দুটি প্রক্রিয়ায় বাংলা অন্ত্যপ্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠিত হয় যেমন:

  • ১. ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া প্রত্যয়,
  • ২. শব্দের সঙ্গে শব্দ প্রত্যয় যোগ করে।
ধাতুর সঙ্গে বাংলা ক্রিয়া প্রত্যয়যোগে বিশেষণ গঠন
ধাতু + সঙ্গী প্রত্যয়বাংলা ক্রিয়া
অন্তউড়ন্ত, চলন্ত, ঝুলন্ত
কেনা (বই), শোনা (কথা), ফোটা (ফুল)
আনোওঠানো (জিনিস), গোছানো (ঘর), জমানো (টাকা)
আল্মাতাল (লোক), মিশাল (বোল)
উকনিন্দুক, লাজুক, মিশুক
উনিকাঁদুনি, নাচুনি, সাজুনি
ওয়াকাঁচোয়া, লাগোয়া
তিচলতি (বই), ঘাটতি (বাজেট), বাড়তি (তহবিল)
শব্দের সঙ্গে শব্দ প্রত্যয়যোগে বিশেষণ নির্মাণ
শব্দ প্রত্যয়বিশেষণ
চোর + আচোরা
কাল + আকালা
পশ্চিম + আপশ্চিমা
খাড়া + আইখাড়াই
বাছা + আইবাছাই
চোলা + আইচোলাই
মাঝা + আরিমাঝারি
রকমা + আরিরকমারি
ধারা + আলোধারাল/ধারালো
জোরা + আলোজোরাল/জোরালো
পাটা + আলিপাটালি (গুড়)
সোনা + আলিসোনালি (ফসল)
রূপা + আলিরূপালি (পর্দা)
গোলাপ + ইগোলাপি
পশম + ইপশমি
ইরান + ইইরানি
জরুর + ইজরুরি
(কাজ) + ইকাজি
সরকার + ইসরকারি
উঁচ + উউঁচু
নীচ + উনীচু
চাল + উচালু
পেটু + উক্পেটুক
লাজু + উক্লাজুক
মিশু + উক্মিশুক
উত্তুর + এউত্তুরে (হাওয়া)
মেট + এমেটে (মসজিদ)
গেঁয় + এগেঁয়ো (যোগী)
ভূত + উড়েভূতুড়ে
হাত + উড়েহাতুড়ে
কেঠ + ওকেঠো
ঝোড় + ওঝোড়ো (হাওয়া)
বুন + ওবুনো (মোষ)
পুঁচ + কেপুঁচকে (ছেলে)
ছিঁচ + কেছিঁচকে (চোর)
নীল + চেনীলচে
লাল + চেলালচে
ঘোলা + টেঘোলাটে
ঝগড়া + টেঝগড়াটে
ধোঁয়া + টেধোঁয়াটে
তুখো + ড়তুখোড়
ত্যাঁদ + ড়ত্যাঁদড়
চাঁদ + পানাচাঁদপানা
খোকা + পানাখোকাপানা
মোটা + পানামোটাপানা
দিন + ভরদিনভর
রাত + ভররাতভর
মাস + ভরমাসভর
গুণ + বন্তগুণবন্ত
প্রাণ + বন্তপ্রাণবন্ত
লক্ষ্মী + মন্তলক্ষ্মীমন্ত
বুদ্ধি + মন্তবুদ্ধিমন্ত
মেঘ + লামেঘলা
পাত + লাপাতলা
পাত + লাপাতলা
ভ্যাপ + সাভ্যাপসা
আলস + সেআলসে
পান + সেপানসে

সমাসের সাহায্যে বিশেষণ গঠন

দ্বন্দ্ব বা বন্ধন সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
বিশেষণ-বিশেষণউঁচু-নীচু, কম-বেশি, জানা-শোনা

কর্মধারয় বা বর্ণন সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
বিশেষণ – বিশেষণকাঁচা-পাকা, চালাক-চতুর, মিঠে-কড়া
উপমানমিশকালো, অরুণরাঙা, হিমশীতল

তৎপুরুষ বা কারকলোপী সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
কর্মকারকলোপীক্ষণস্থায়ী, দীর্ঘস্থায়ী চিরবঞ্চিত
করণকারকলোপীআইনসংগত, ঢেঁকিছাটা, ঘটনাবহুল
অপাদান কারকলোপীহাতছাড়া, বিদেশাগত, রোগমুক্ত
অধিকরণ কারকলোপীজলমগ্ন, ঝুড়িভরতি, বস্তপচা
উপপদ কারকলোপীগাঁটকাটা, ঘরপোড়া, হাড়ভাঙা
অলুক কারকলোপীকলে-ছাঁটা, তাঁতে-বোনা, বানে-ভাসা
না-কারকলোপীঅনাবাদি, বে-আইনি। [আদ্যপ্রত্যয়যুক্ত]

বজ্রীহি বা অন্যার্থক সমাসের সাহায্যে

সমাস প্রকারউদাহরণ
সাধারণ অন্যার্থকঅল্পবয়সি, লেজকাটা, ঠোঁটকাটা
ব্যধিকরণ অন্যার্থকখড়ম-পেয়ে, ক্ষণজন্মা, বোঁটা খসা
না- অন্যার্থকঅনন্ত, বেপরোয়া, বেহায়া
সহার্থক অন্যার্থকসকরুণ, সচিত্র, সস্নেহ
সংখ্যাবাচক অন্যার্থকদশহাতি, একমণি, চারপেয়ে
অলুক অন্যার্থকচশমা-নাকে, ছাতা-হাতে, জুতো-পায়ে

সংখ্যাশব্দের সাহায্যে বিশেষণ গঠন

সংখ্যাশব্দ অংশে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

ধ্বন্যাত্মক শব্দের সাহায্যে বিশেষণ গঠন

ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো দুই ধরনের:

১. মৌলিক ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ: সোঁ সোঁ (ঝড়), শনশন (হাওয়া), দুরুদুরু (বুক), ভুরভুর (গন্ধ)।

২. সাধিত ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ: এ (ইয়া) অন্ত্যপ্রত্যয়যুক্ত হয়ে এগুলো গঠিত হয়। যেমন- ক্যাটকেটে (রং), ফুটফুটে (জ্যোৎস্না), ভুলভুরে (গন্ধ), টুকটুকে (রং), মুচমুচে (চানাচুর)।

৪. ক্রিয়া গঠন:

বাংলা ক্রিয়া গঠন প্রক্রিয়ার একটি দিক হচ্ছে ক্রিয়াপদ গঠন। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে প্রকার, কাল, অনুজ্ঞা, পক্ষ, অসমাপিকা ইত্যাদি বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। এছাড়া সিদ্ধ ধাতুর সঙ্গে অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে সাধিত ধাতু গঠন করা হয়ে থাকে। এখানে সাধিত ও ক্রিয়াবিশেষ্য গঠনের দিকটি দেখানো হলো। বাংলায় সাধিত ধাতু দুরকম- প্রযোজক ধাতু ও নামধাতু, দুটিই গঠিত হয়- আ প্রত্যয় যোগ করে, কিছুটা এভাবে:

অপ্রযোজক ধাতু + আ-প্রযোজক ধাতুক্রিয়াবিশেষ্য
দো + আ-দেওয়া-দেওয়ানো
যা + আ –যাওয়া-যাওয়ানো
দ্যাখ্ + আ –দেখা-দেখানো
ভোগ্‌ + আ –ভোগা-ভোগানো
শেখ্ + আ –শেখা-শেখানো
বিশেষ্য/বিশেষণ + আ-নামধাতুক্রিয়াবিশেষ্য
ঘুম + আ –ঘুমাঘুমানো
দণ্ড > দাঁড় + আ –দাঁড়াদাঁড়ানো
সাঁতার + আ –সাঁতরাসাঁতরানো
পিছল + আ –পিছলাপিছলানো
চমক + আ –চমকাচমকানো

৫. ক্রিয়া বিশেষণ গঠন

গঠনের দিক থেকে ক্রিয়া বিশেষণ দু ধরনের মৌলিকসাধিত

  • মৌলিক ক্রিয়া বিশেষণ : আস্তে, টানা, দ্রুত, সিধে, সোজা ইত্যাদি।
  • সাধিত ক্রিয়া বিশেষণ : সাধিত ক্রিয়া বিশেষণ গঠনের দিক থেকে দু ধরনের হতে পারে।

ক. একপদী ক্রিয়া- বিশেষণ : ঘরে, বাড়িতে, এভাবে;

খ. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ : ভালো করে, ভালোয় ভালোয়, বাড়ি থেকে পালিয়ে।

ক. একপদী ক্রিয়া- বিশেষণ গঠন

  • এ- বিভক্তি বা য়- বিভক্তি যোগ : ঘরে, বাগানে, দূরে, বাসায়, রাস্তায়
  • তে – বিভক্তিযোগে : পানিতে, বাড়িতে, মাটিতে
  • এ – বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : ওপরে, কাছে, নিচে, পাশে, পিছনে, ভিতরে, মধ্যে, সামনে ইত্যাদি।

সমাসের মাধ্যমে

এ ধরনের ক্রিয়া- বিশেষণ নানাভাবে হতে পারে। যেমন সমার্থক বা বিপরীতার্থক পূর্বক্রিয়ার ক্রিয়ার অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের মাধ্যমে দেখেশুনে, দিয়েথুয়ে, ধুয়েমুছে, নেড়েচেড়ে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে, বুঝেশুনে, ভেবেচিন্তে, রেখেঢেকে, লিখেপড়ে, শুয়েবসে, হেসেখেলে ইত্যাদি।

সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দের অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের মাধ্যমে: ওপরে নিচে, কাছে দূরে, সামনে পিছনে ইত্যাদি।

দ্বিরাবৃত্তির মাধ্যমে: কাছাকাছি, কোণাকুণি, খোলাখুলি, তাড়াতাড়ি, দেখাদেখি, পাশাপাশি, মাঝ-মাঝি, মুখোমুখি, সরাসরি, সোজাসুজি ইত্যাদি।

বিশেষণ + ভাবে: এভাবে, সেভাবে, ক্লান্তভাবে, বিষণ্ণভাবে, ভালোভাবে, মসৃণভাবে, মৃদুভাবে, রাগতভাবে, লজ্জিতভাবে ইত্যাদি।

খ. বহুপদী ক্রিয়া-বিশেষণ গঠন

বহুপদী ক্রিয়া-বিশেষণ নানাভাবে গঠিত হয়ে থাকে। যেমন:

১. যুক্ত ক্রিয়া + এ (<ইয়া) : উপকার করে, কসম খেয়ে, চোখ পাকিয়ে, মাথা তুলে, হাত চালিয়ে, হিসাব করে ইত্যাদি।

২. অনুসর্গজাত ক্রিয়া বিশেষণের দ্বিত্ব ঘটিয়ে : পাশে পাশে, পিছনে পিছনে, মধ্যে মধ্যে, মাঝে মাঝে, সঙ্গে সঙ্গে ইত্যাদি।

৩. বিশেষ্যের দ্বিত্ব ঘটিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে-এ/-য়/অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে : দিনে দিনে, সকাল সকাল, সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় ইত্যাদি।

৪. বিশেষণের দ্বিত্ব ঘটিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে-এ/-য় অন্ত্যপ্রত্যয় যোগ করে : টাটকা টাটকা, ভালোয় ভালোয় ইত্যাদি।

৫. তুলনাবাচক অলংকার প্রয়োগ করে : ঝড়ের মতো, বিদ্যুৎগতিতে, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো, শ্যাওলার মতো, হরিণের মতো ইত্যাদি।

৬. সম্বন্ধ পদ + এ-যুক্ত অনুসর্গ: এঁদো গলির ভিতরে, টেবিলের ওপরে, আছাড় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, মনের গভীর থেকে ইত্যাদি।

৭. অসমাপিকায় দ্বিত্ব ঘটিয়ে: কাশতে কাশতে, গাইতে গাইতে, দেখতে দেখতে, বলতে বলতে, শুনতে শুনতে ইত্যাদি।

৮. অসমাপিকায় দ্বিত্বের মধ্যে না-পদাণু যুক্ত করে : দাঁড়াতে -না – দাঁড়াতে, দেখতে না-দেখতে, বলতে-না-বলতে, বুঝতে না বুঝতে, লিখতে – না- লিখতে ইত্যাদি।

৯. অসমাপিকায় শেষ হওয়া বাক্যকল্প (clause) ব্যবহার করে: আশায় আশায় বসে থেকে, ঘর থেকে দপা ফেলে, বাড়ি থেকে পালিয়ে, সারাটি দিন বিছানায় গড়িয়ে ইত্যাদি।

৬. যোজক গঠন

প্রমিত বাংলায় যেসব যোজক শব্দের ব্যবহার হয় সেগুলো মৌলিক শব্দ, গঠিত বা সাধিত শব্দ নয়। এ শব্দগুলোর মধ্যে সংস্কৃতের শব্দঋণ বেশকিছু আছে- এবং তথা, কিন্তু, বরং পরন্ত তথাপি, তত্রাচ, অথবা, কিংবা অতএব ইত্যাদি যোজক শব্দগুলোকেও দুভাগে ভাগ করা যায় ১. ‘সাধারণ’ যোজক ও ২. ‘বিশেষ’ যোজক।

সাধারণ যোজক গুলো পদবন্ধ এবং বাক্য উভয়কে যোগ করে মাত্র, দুয়ের সম্পর্কের মধ্যে কোনো অর্থগত জটিলতা আনে না। কিন্তু বিশেষ যোজক গুলোতে মূলত দুটি বাক্যের যোগ ঘটনায়, আবার সেই সঙ্গে বিশেষ যোজকগুলো নানা ধরনের অর্থেরও বাহন হয়ে উঠে এবং প্রথম বাক্যটিকে নানাভাবে সংকীর্ণ বা বিস্তারিত করে।

কিন্তু, তবু, তবুও, বরং, পরন্ত, নতুবা, হয়… না-হয়, যদি… তবে, তবে কিনা, তথাপি, অতএব, তাহলে ইত্যাদি
অথচ, তত্রাচ, না, বা, কিংবা, অথবা, নইলে…

৭. অনুসর্গ

বাংলা ব্যবহৃত অনুসর্গগুলো মৌলিক শব্দ হিসেসেই গণ্য করা চলে। এগুলোর অধিকাংশের গঠনে অধিকরণ বিভক্তি ‘এ’ যুক্ত হয়েছে। যেমন-

শব্দঅধিকরণ বিভক্তি
ওপরওপরে
কাছকাছে
দিকদিকে
নিচনিচে
মাঝমাঝে
পক্ষপক্ষে
পাশপাশে
পিছনপিছনে
সঙ্গসঙ্গে
সাথসাথে
সামনাসামনে

দু’ সারির শব্দই অভিধানে ভুক্তি লাভ করেছে। এছাড়া কিছু অনুসর্গ রয়েছে যেগুলোকে বলা যায় ক্রিয়াজাত অনুসর্গ। যেমন: ‘বলে’, ‘হতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’, ‘নিয়ে’। এগুলোর রূপে পূর্ব ক্রিয়ার অসমাপিকার রূপের সঙ্গে অভিন্নতা রয়েছে। তবে দুয়ের ব্যাকরণগত ভূমিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূর্বক্রিয়া ক্রিয়ার অর্থ ত্যাগ করে না এবং বাক্যের মধ্যে দুটি ঘটনার যোজক হিসেবে কাজ করে- ‘তুমি পানি ছাড়া ওখানে যেতে পারবে না।’ কিন্তু ‘এতগুলো পচা ডিম নিয়ে আমি যে কী করি’-তে ‘নিয়ে’ অনুসর্গ মাত্র।

৮. আবেগ শব্দগঠন

আবেগ শব্দগুলোও সাধারণভাবে মৌলিক শব্দ, এগুলো নির্মিত বা সাধিত শব্দ নয়। মৌলিক আবেগ শব্দগুলো ধ্বনিগত তীব্র আবেগের উচ্চারণ মাত্র, পূর্ণাঙ্গ অর্থবাহী শব্দ নয়। যেমন: ধুৎ, ধুস্, ধ্যাৎ, ভ্যাট্, ফাট্, হ্যাট, হুশ্, উঁহু, অ্যাঁ, ইস্, (ইশ), ফুশ্, উহ্, আহ্ ইত্যাদি।

কিছু আভিধানিক শব্দ ও ক্রিয়াপদ তীব্র আবেগে উচ্চারিত হয়েও আবেগের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। দুর! থাম্! যাঃ! ভাগ্‌! ফোট্! মর্! পালা! ছাড়ু! রাখ! হট্‌! ইত্যাদি এগুলো মূলত তাড়নসূচক অনুজ্ঞা-ক্রিয়াপদের আবেগাশ্রিত ব্যবহার মাত্র। যেমন: ‘চাপ!’ মূলত ‘চুপ কর’- এ অনুজ্ঞা ক্রিয়াপদের তীব্র আবেগময় প্রকাশ।

শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে শব্দগঠন

বাংলা ভাষার শব্দনির্মাণের এলাকায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত আর- একটি উপায়- শব্দের দ্বিত্ব। এ ধরনের দ্বিত্বের (কখনো-বা শব্দদ্বিত্ব বলতে শুধু একই শব্দের বা পদের পুনরাবৃত্তি বোঝায় না। শব্দদ্বিত্বের প্রক্রিয়া বিচিত্র। এব শাখাচিত্র এরকম হতে পারে।

শব্দদ্বিত্বের শ্রেণিবিভাগ

শব্দদ্বিত্বকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: যেমন:

  • ১. প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব
  • ২. পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দদ্বিত্ব

১. প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে সমাসবদ্ধ দুটি শব্দের একটি অন্যটির প্রতিধ্বনির মতো যেমন: অলিগলি, বইটই। এ জাতীয় শব্দদ্বিত্বের শব্দ দুটি পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে।

প্রতিধ্বনিমূলক শব্দদ্বিত্ব তিন ধরনের হতে পারে:

  • ক. অনুকারের মাধ্যমে
  • খ. ব্যঞ্জন বিকল্পনের মাধ্যমে
  • গ. স্বরবিকল্পনের মাধ্যমে।

ক. অনুকারের মাধ্যমে

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বের একটি অংশ অর্থবহ, অন্য অংশ আপাত অর্থহীন। এগুলো গঠনের দিক থেকে দ্বন্দ্ব বা বন্ধন সমাসের মতো। যেমন: চাকর-বাকর, চাকরি-বাকরি, বাসন-কোসন, ফাঁকি-ঝুঁকি, পোশা-আশাক, হাঁড়ি-কুঁড়ি, । কখনো কখনো আপাত নিরর্থক শব্দটি অনুচর না থেকে আগে এসে বসে, যেমন- অলিগলি, সুলুক-সন্ধান।

খ. ব্যঞ্জন বিকল্পনের মাধ্যমে শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বের দ্বিতীয় শব্দের প্রথমে প্রথম শব্দের আদ্য ব্যঞ্জনের অর্থহীন প্রতিধ্বনি ঘটে। যেমন: আম-টাম, লুচিফুচি, চাকর-বাকর, এলোমেলো, রকম-সকম ইত্যাদি।

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে ব্যঞ্জন বিকল্পন কয়েক রকম হতে পারে। যেমন:

ট-বিকল্পন

অঙ্ক-টঙ্ক, অভ্যাস-টভ্যাস, আম-টাম, ইট-টিট, উপায়-টুপায়, একটা-ট্যাকটা, কাগজ-টাগজ, খরচ-টরচ, গোরু-টোরু, ঘর-টর, চাল-টাল, ছাগল-টাগল, জ্বর-টর, ঝাল-টাল, তাল-টাল, থাকা-টাকা, দর-টর, ধুলো-টুলো, নিন্দে-টিন্দে, পাশ-টাশ, ফল-টল, বাড়ি-টারি, ভয়-টয়, মার-টার, রাজা-টাজা, লাভ-টাভ, শাসন-টাসন, ষাঁড়-টাঁড়, সম্মান-টম্মান, হুকুম টুকুম ইত্যাদি।

তবে আদ্যব্যঞ্জনেই যদি ট্ থাকে, তাহলে প্রতিধ্বনি হিসাবে ফ্ ব্যঞ্জনটির আগম ঘটে। যেমন- টাটু-ফাটু, টাইম-ফাইম, টাকা-ফাকা।

ব-বিকল্পন

চুলবুল, আগডুম বাগডুম, চাকর-বাকর, হড়বড়, তড়বড়, গড়বড়।

ম-বিকল্পন

এলোমেলো, লুচি-মুচি, ঘুষো-মুষো, তেল-মেল।

লক্ষণীয়: ‘ঝলমল’, ‘ঝিকিমিকি’, ‘কচরমচর’, ‘খচমচ’, ‘খচরমচর’ সম্পূর্ণত ধ্বন্যাত্মক।

স্(শ্)-বিকল্পন

গুটিশুটি, গুটিয়ে-গুটিয়ে, জড়োসড়ো, গল্পসল্প, বুড়োসুড়ো, গল্পে-সপ্পে (গোপ্পে-শোপ্পে), মোটাসোটা, রকম- সকম, বড়োসড়ো, অল্পসল্প, নরম-সরম, মুড়িসুড়ি, বোকাসোকা, আঁটোসাঁটো, বুদ্ধিশুদ্ধি, বোধশোধ।

অন্যান্য বিকল্প

আবড়া-থাবড়া, উসখুস, উশকো-খুশকো, নটখট, নজ-গজ, হাঁস-ফাঁস, আই-ঢাই, কাঁচু-মাচু, অলি-গলি, নিশ-পিশ, উলুক-ঝুলুক, আবোল-তাবোল, এবড়ো-থেবড়ো, এবড়ো-থেবড়ো, ছটফট, হিজিবিজি, হাবিজাবি, ফষ্টিনষ্টি, আঁকুপাঁকু, হাঁচোড়পাঁচোড়, নটখট, হম্বিতম্বি, হ্যানো-ত্যানো, হইচই, হাকোচ-পাকোচ, হুডুম-দুড়ুম।

গ . স্ববিকল্পনের মাধ্যমে শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে দ্বন্দ্বে সমাসের মতো সংগঠিত দুটি শব্দে দ্বিতীয়টি প্রথমটির হুবহু পুনরাবৃত্তি হয় না। প্রথমটির ব্যঞ্জনগুলো দ্বিতীয়টিতে পুনরাবৃত্ত হয়, কিন্তু স্বরগুলো হয় না, একই ব্যঞ্জনগুচ্ছ ভিন্ন একটি বা দুটি স্বরধ্বনির আশ্রয়ে গ্রন্থিত হয়।

এগুলো ধ্বন্যাত্মক এবং অর্ধ-ধ্বন্যাত্মক দু ভাগে ভাগ করা যায়।

ক. অর্ধ-ধ্বন্যাত্মক: টুং-টাং, ঠুং-টাং, টুপ-টাপ, টুপুর-টাপুর, টাপুর-টুপুর, টুক্-টাক্, খুছু-খাচ্, ধুপ-ধাপ, হুপ্-হাপ্, দুপ্-দাপ্, চুঁশ্টাশ, ঝুঝাপ, ঝাপুর-ঝুপুর, দুড়-দাড়, দুডুম্-দাড়ম্, খুট-খাট্, খুটুর-খাটুর, খুসুর-খাসুর, দুম্-দাম, ধুমুশ্-ধামুশ্, ধুপুশ্-ধাপুশ্, হাপুস্-হুপুস্, ফিস্-ফাস্, ফুস্-ফাস্, ফুসুর-ফাসুর, ছিম্-ছাম্, হুট-হাট্, ভুটভাট (পেট ভুটভাট করছে), ছ্যাঁক-ছোঁক।

খ. ধ্বন্যাত্মক: অর্ধধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বন্দ্বে দ্বিতীয় অংশটি নিরর্থক, অর্থাৎ ধ্বন্যাত্মক। যেমন- টুকরো-টাকরা, খুচরো-খাচরা, সাফসুফ, জোগাড়-জাগাড়, প্যাঁচ-পোঁচ, চুপচাপ, ঘুষ-ঘাস, ফিট্-ফাট্, তুক-তাক, টুকরো-টাকরা, ডাক-ডোক, দাগ-দোগ, ফাঁক-ফোঁক (র), ভিড়-াড়, মিট-মাট, গোছ-গাছ, মোট-মাট, কালো-কালো, ধার-ধোর, ভুল-ভাল, ঢাকা-ঢুকি, ঢিলে-ঢালা, ঠিক-ঠাক ইত্যাদি।

২. পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দদ্বিত্ব

এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে প্রথম শব্দটিই আর একবার আবৃত্ত হয়, তার ফলে এক ধরনের ‘যমজ’ শব্দের সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষায় এ ধরনের শব্দদ্বিত্বে বহুবিধ বৈচিত্র্য দেখা যায়।

এ ধরনের দ্বিত্ববত গঠন প্রধানত দুরকম: ধ্বন্যাত্মক এবং অর্থাত্মক। অর্থবাহী শব্দের দ্বিত্বে যেমন অর্থের বিপুল বৈচিত্র্য দেখা যায় ধ্বন্যাত্মক শব্দের দ্বিত্বে সে বৈচিত্র্য জাগে না। খুব বেশি হলে ধ্বনিটির পুনরাবৃতি্ বা প্রলম্বন বোঝায়, যেমন- সাঁ, সাঁ সাঁ।

ক. ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্ব:

এ ধরনের দ্বিত্বে ধ্বন্যাত্মক ধ্বনির পুনরাবৃত্তি বা প্রলম্বন ঘটে। কখনও বা তাতে বহুত্বের অর্থ যুক্ত হয়। যেমন:

  • সাঁ করে তিরটা ছুটে গেল।
  • সাঁ সাঁ করে তীরগুলো ছুটে গেল।
  • সাঁ সাঁ সাঁ সাঁ করে তীর ছুটে যাচ্ছে।

মুখের কথা সাঁ কথাটির আঁ ধ্বনিটির প্রলম্বন হতে পারে: ‘সাঁ-করে তীরটা ছুটে গেল’।

ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্বের গঠন

ধ্বন্যাত্মক শব্দদ্বিত্বের গঠন কয়েক রকম হতে পারে। যেমন:

  • ১. ধ্বন্যাত্মক ধ্বনি বা শব্দের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে,
  • ২. ধ্বন্যাত্মক শব্দযুগলের মাঝখানে আ-এর আগম ঘটিয়ে,
  • ৩. ধ্বন্যাত্মক শব্দের যমজ গঠন প্রক্রিয়া।
১. ধ্বন্যাত্মক ধ্বনি বা শব্দের পুনরাবৃত্তি বা দ্বিত্ব

আঁক্-আঁক্, ইস্-ইস্, উহ্-উহ্, কুটকুট, কোঁতকোঁত (করে গেলা), কুটুস্-কুটুস্, খক্-খক্, খুটখুট, খুটুর-খুটুর, খ্যাঁক্-খ্যাঁক্, ঘ্যাঁক্-ঘ্যাঁক্, ঘেউ ঘেউ, ছি-ছি, হ্যা-ছ্যা, ছ্যাঁক-ছ্যাঁক, ঝাট, টুংটুং, ঠুকঠুক, ঠুকুস্-ঠুকুস্, ঠকর-ঠকর, ডুগডুগ, ঢংঢং, থপ্নপৃ, থুথুপ, দুমদুম্, দুপদুপ্ত, ধুপধুপু, ধুপুর ধুপুর, ফট্‌ফট্ ফোঁসফোঁস্, ভটক্ষট্, ভেঁস্, ভোঁস্, শোঁ-শোঁ, সাঁ-সাঁ, সাঁই-সাঁই, হুশ্-হুশ্, হুম্, হিম্-হিস্।

মুখের কথায় এ দ্বিত্বের একক শব্দটিকে পৃথকভাবে পাওয়া যায়, যেমন:

  • কুট করে কামড়ে দিল।
  • কোঁত করে গিলে ফেলল।
  • মাছটা ফুটন্ত তেলে ফেলতেই ছ্যাঁক করে আওয়াজ হলো।

দ্বিত্বের ফলে ধ্বনিটির পুনরাবৃত্তি বা ব্যাপ্তি বোঝায়।

২. ধ্বন্যাত্মক শব্দযুগলের মাঝখানে আ-এর আগম (insertion)

এ ধরনের কোনো কোনো ধ্বন্যাত্মক শব্দে প্রথম অংশের পরে আ-এর নিধান ঘটার ফলে আর-এক ধরনের অব্যাহত ব্যাপ্তির অর্থ সূচিত হয়। যেমন কপ্‌কপ্‌ >কপাকপ্, খচ্‌খচ্‌, > ,খচাখচ্, খপ্‌খপ্‌ > খপাখপ্‌, গব্‌গব্‌ > গবাগব্‌ ঝট্‌ঝট্‌ >ঝটাঝট্‌, ঝন্‌ঝন্ > ঝনাঝন, ফট্‌ফট > ফটাফট্, ভট্‌ভট্‌ > ভটাভট। এরকম দমাদম্, পটাপট, খটাখট

কখনোও মুখের কথায় পুনরাবৃত্ত শব্দের আদ্যব্যঞ্জনটির দ্বিত্বও ঘটে। যেমন ঝটাট, দমাদ্‌দম, কড়াক্কড় (বাজের শব্দ,), ভটাব্‌ভট, পটাপ্পট, গবাগ্‌গব, কপাক্কপ।

ধ্বন্যাত্মক শব্দের পুনরাবৃত্তি দুয়ের বেশি হতে পারে বক্তার অভিপ্রায় অনুযায়ী। যেমন ‘ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর চলছেই’।

‘শোঁ শোঁ শোঁ শোঁ-হাওয়ার সে কী আওয়াজ!’

৩. ধ্বন্যাত্মক শব্দের যজম গঠন প্রক্রিয়া

এ ধরনের ধ্বন্যাত্মক শব্দ গঠনের রূপের দিক থেকে যমজ, অর্থাৎ দুটি সমান উপাদানে গঠিত বলে মনে হয়। ফলে এগুলোর অর্ধাংশ কোনো অর্থের প্রকাশ করে না। অর্ধাংশের একক প্রয়োগও হয় না। যেমন: ক্যাটক্যাট, কুতকুত, (কালো) কুচকুচ, গজগজ, গজরগজর, গুজুরগুজুর, গনগন, গুনগুন, ঘ্যানঘ্যান, ঘ্যানরঘ্যানর, ঘুটঘুট, ঘসঘস, চকচক, চিকচিক, জুলজুল (করে তাকানো), ঝকঝক, ঝিকমিক, ঝিরঝির, ঝমঝম, ঝমর-ঝমর, ঝুমঝুম, টরটর (করে কথা বলা), টুকটুক (লাল-) টসটস (রস-করছে), তকতক, তিরতির (-করে কাঁপছে), থকথক, থিকথিক, প্যাটপ্যাট, ফুঁকফুঁক, ফুসফুস, ফুসুর-ফুসুর, ভনভন, ভ্যাজরভ্যাজর, লকলক, সরসর (-করে কী একটা চলে গেল)।

খ. অর্থাত্মক: শব্দের দ্বিত্ব

এ ধরনের দ্বিত্বশব্দ অর্থবহ শব্দের পুনরাবৃত্তি বা দ্বিত্ব প্রয়োগ বোঝায়। গঠনের দিক থেকে এ ধরনের শব্দগঠন দু ধরনের হতে পারে।

  • (ক) বিভক্তিচিহ্নহীন শব্দের পুনরাবৃত্তি।
  • (খ) বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি।
(ক) বিভক্তিচিহ্নহীন শব্দের পুনরাবৃত্তি

বিশেষ্য বিশেষণ সর্বনাম ক্রিয়াবিশেষণ-সব ধরনের পদেরই বিভক্তিহীন পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায়, নানা অর্থে, যেমন:

  • ১. উদ্ধৃতিসূচক (quotative): ‘জাত জাত করেই দেশটা গেল!’, কলম কলম করছিলে এতক্ষণ, এই নাও তোমার কলম!’, ‘সকাল থেকে মা মা বলে কাঁদছে ছেলেটা!’, ‘সর্বক্ষণ আমি আমি করে লোকটা’, ‘ভালো ভালো করেই ওর মাথাটা খেলে’।
  • ২. ব্যাপ্তি ও বহুত্ব: ‘যাও, বাড়ি বাড়ি (=বাড়িতে বাড়িতে) গিয়ে কথাটা জানিয়ে এসো!, ‘দেশ দেশ ঘুরে শেষে এই বগুড়ায় বাসা নিলে?’, কত কত লোক দেখেছি, তোমার মতো কঞ্জুস দেখিনি।’, ‘এরকম খারাপ খারাপ কথা বললে এ রফা থেকে বার করে দেব।’, ‘বাগানে প্রচুর লাল লাল ফুল ফুটেছে।’, ‘দুর্নীতিবাজরাই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।’
  • ৩. বারংবারতা ও পুনরাবৃত্তি: ‘হঠাৎ হঠাৎ অমন চমকে দাও কেন?’, ‘জলদি জলদি কাজগুলো সেরে ফেলো।’
  • ৪. নৈকট্য (Proximity): ‘এরকম ওপর-ওপর কথায় কিছু বোঝা যায় না।’, ‘ভাসা-ভাসা জ্ঞান’, ‘উডু- উড়ু মন’, ‘দুঃখী দুঃখী মুখ’, ‘বোকা বোকা কথা’, ‘পাগল-পাগল ভাব’, ‘ঘুম-ঘুম চোখ’, ‘উদাস-উদাস দৃষ্টি।’
  • ৫. পূর্ণতা (fullness): ‘গরম গরম চা’, ‘টাটকা টাটকা খবর’, ‘ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা থাকতে থাকতে খেয়ে নাও।’ বলা বাহুল্য, একই প্রয়োগ প্রতিবেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। যেমন, ‘গরম গরম বক্তৃতা’ একাধিক বক্তৃতা বোঝায়, কিন্তু ‘গরম গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নাও’ বোঝায় পূর্ণতা বা পূর্ণ গরম অবস্থা আবার ‘গা-টা গরম-গরম লাগছে’ নৈকট্যের অর্থ ইঙ্গিত করে।
  • ৬. বিভক্তিহীন সর্বনাম :
  • ক. কণ্টিত বহুত্ব বা ব্যাপ্তি অর্থে: কখন কখন, কে কে, যে যে, কবে কবে, সেই সেই।
  • খ. উদ্ধৃতিসূচক : ‘ওই ওই’ (বলে চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটি)! ‘তুমি তুমি!’ (লোকটি আর কিছু বলতে পারল না)। ‘আমি আমি’ করা।
(খ) বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি

বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি, অর্থাৎ পদের পুনরাবৃত্তি। বাংলায় নানা ধরনের বিভক্তি-যুক্ত পদেরই দ্বিত্ব ঘটে। তবে একদিকে বিশেষ্য ও সর্বনামের, এবং অন্যদিকে ক্রিয়াতে বিভক্তিযোগের ঘটনা ব্যাপক ঘটে বলে সেসব ক্ষেত্রে দ্বিত্বের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় বেশি। বিশেষ্যভিত্তিক অনুসর্গ পদ সাধারণভাবে-এ বিভক্তির যোগেই অনুসর্গ হয়ে ওঠে-সেগুলোর দ্বিত্বও ব্যাপকভাবেই ঘটে।

বাংলায় বিভক্তিযুক্ত শব্দের পুনরাবৃত্তি নানা রূপের হয়ে থাকে। যেমন:

বিশেষ্য +র/এর: সাধারণভাবে বহুত্ব ও ব্যাপ্তি অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: দূরের দূরের যাত্রী, দোকানের দোকানের জিনিস, খেতের খেতের ফসল, মাসের মাসের মাইনে, মজার মজার কথা, দিনের দিনের হিসেব, বাড়ির বাড়ির ময়লা ইত্যাদি।

বিশেষ্য + এ: বিচ্ছিন্ন বহুত্ব ও ব্যাপ্তি ও নানার্থকতা প্রকাশ করে। যেমন: ঘরে ঘরে, ফাঁকে ফাঁকে, দেশে দেশে, ঝাঁকে ঝাঁকে, লোকে লোকে, হাটে হাটে, বাজারে বাজারে, গাছে গাছে, তারায় তারায়, ডালে ডালে, পাতায় পাতায়।

এগুলোর কিছু বিশিষ্ট প্রয়োগ দেখানো হলো:

  • ক. তাৎক্ষণিকতা: হাতে হাতে, চোখে চোখে, মুখে মুখে (কথা);
  • খ. অবিচ্ছেদ: পায়ে পায়ে (পরিক্রমা), সুরে সুরে, ছায়ায় ছায়ায়, ডাঙায় ডাঙায়, মেঘে মেঘে;
  • গ. স্থানিকতা: পেটে পেটে, তলায় তলায়, গোপনে গোপনে, ভিতরে ভিতরে, বাইরে বাইরে, পথে পথে;
  • ঘ. নৈকট্য: মাথায় মাথায়, গায়ে গায়ে, হাঁটুতে হাঁটুতে মাপে মাপে।

সর্বনাম + -কে: বহুত্ব বোঝায়। যেমন কাকে কাকে খেতে বলেছে? যাকে যাকে বলেছে তার তার কাছে যেন কার্ড পৌছায়।

সর্বনাম+-র/-এর
  • উদ্ধৃতিসূচক: সারাক্ষণ আমার আমার করে লোকটা।
  • বহুত্ব: নিজের নিজের মালের দিকে নজর রাখবেন। যার যার শোক, তার তার সান্ত্বনা। কার কার কাছে টাকা আছে?
বিশেষণ ও সংখ্যাশব্দ + এ/তে
  • ব্যাপ্তি: ভালোয় ভালোয় (বিশেষ্য-প্রয়োগ);
  • সংখ্যা বিশেষণে বহুত্ব: হাজারে হাজারে, লাখে লাখে, শয়ে শয়ে, কোটিতে কোটিতে;
  • যোগ: একে একে (দুই), দুয়ে দুয়ে (চার), দশে দশে (কুড়ি);
  • অনুবর্তন: একে একে সবাই এসে জুটল।
অনুসর্গ + এ (বিশেষ্যমূলক অনুসর্গ)
  • ঈষদ্ভাব: কাছে কাছে, পাশে পাশে, পিছনে পিছনে, সামনে সামনে।
  • বণ্টিত ব্যাপ্তি: মাঝে মাঝে, মধ্যে মধ্য, দিকে দিকে।
ক্রিয়া (ধাতু) + সামান্য বর্তমান
  • ঊষদ্ভাব, উন্মুখতা ও নৈকট্য: যায় যায়, মরে মরে, (তখন সন্ধ্যা) হয়-হয়, পড়ে-পড়ে, ধরি ধরি।
  • উদ্ধৃতিসূচক : আসি আসি! এত তাড়া কিসের? যাই যাই! বার বার ডাকাডাকির দরকার নেই।

প্রলম্বন বা টানা পুনরাবৃত্তি অর্থে কখনো মধ্যে সংযোজক ‘আর’ বসিয়ে ক্রিয়ার দ্বিত্ব হয়। যেমন: ভাবে আর ভাবে, হাঁটে আর হাঁটে, গড়ায় আর গড়ায়, চলে আর চলে।

এ অর্থেই মাঝখানে ‘তো’ বসিয়েও কোনো কোনো ক্রিয়ার দ্বিত্ব ঘটে। যেমন: বসে আছে তো আছেই। কখনো দ্বিতীয় ক্রিয়াটি যৌগিক ক্রিয়ার রূপ নেই ‘খায় তো খেয়েই যায়,’ ‘গায় তো গেয়েই চলে।’ ‘কাঁদে তো কেঁদেই চলে।’

অসমাপিকা ক্রিয়া
  • পূর্বক্রিয়া: অনবচ্ছিন্নতা বা পুনরাবৃত্তিসূচক- বলে বলে, গিয়ে গিয়ে, শুনে শুনে, ডেকে ডেকে, ভেবে ভেবে।
  • নিমিত্তার্থক: তাৎক্ষণিকতা ও সমব্যাপ্তি বোঝায়; দেখতে দেখতে, বলতে বলতে ক্রিয়ার প্রলম্বন ও পুনরাবৃত্তি বোঝাতে হাঁটতে হাঁটতে, ভাবতে ভাবতে, শুনতে শুনতে, লিখতে লিখতে। কখনো কখনো মধ্যে একটি ‘না’-এর নিধান ঘটিয়ে তাৎক্ষণিকতাকে প্রবলতা দেওয়া হয়- দেখতে না দেখতে, শুনতে না শুনতে, ভাবতে না ভাবতে, বসতে না বসতে, চাখতে না চাখতেই।
ক্রিয়া + ঘটমান, পুরাঘটিত বর্তমান
  • মূলত উক্তির উদ্ধৃতিসূচক: ‘যাচ্ছি যাচ্ছি’ করা, ‘হয়েছে হয়েছে’ (‘যথেষ্ট হয়েছে’ অর্থে), ‘দেখেছ, দেখেছ! লোকটা কী কাণ্ড করল।
  • অধৈর্যসূচক: ‘হয়েছে হয়েছে! এখন চুপ কর।’ ‘হচ্ছে হচ্ছে! তুমি একটু ধৈর্য ধর।’ ‘বুঝেছি বুঝেছি! আর বরতে হবে না’
  • নিশ্চয়তাসূচক: ‘মেরেছি মেরেছি! এখন কী করবি কর।’ ‘খেয়েছে খেয়েছে! ত নিয়ে এত রাগারাগির কী আছে?

মাঝখানে ‘তো’ বসিয়ে ঘটমান বর্তমান আর অতীতের ক্রিয়ার দ্বিত্বের এবং দ্বিতীয় ক্রিয়ায়ই প্রত্যয় যোগের, দৃষ্টান্তও পাই- ‘চলছে তো চলছেই, দেখছে তো দেখছেই, হাসছে তো হাসছেই।’

ক্রিয়া + সামান্য অতীত
  • উদ্ধৃতিসূচক: ‘গেল গেল!’ ‘মলাম-মলাম!’ ‘পালাল পালাল! ধর্, লোকটাকে!’ দৃষ্টি-আকর্ষণসূচক: ‘শুনলে শুনলে! লোকটা কী বলল?’ ‘দেখলে দেখলে! উনি কীভাবে উড়িয়ে দিলেন কথাটা!’
  • নিশ্চয়তা ও তাচ্ছিল্যসূচক দ্বিত্ব: “গিয়েছিল গিয়েছিল, তাতে এমন কী ক্ষতি হয়েছে।’ ‘বলেছিলাম বলেছিলাম! সে যখন বলেছিলাম তখন বলেছিলাম।’ ‘দেখল দেখল! তাতে কী এসে গেল?’ ‘ভাবল ভাবল! ও নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।’ ‘যেতাম যেতাম! তাতে কী হয়েছে! এখন তো আর যাই না!’ ‘চেয়েছিল চেয়েছিল। এখন ওসব কথা তুলে লাভ নেই।’ এক্ষেত্রেও দুটি ক্রিয়ার মধ্যে ‘তো’ বসতে পারে।
ক্রিয়া + ভবিষ্যৎকাল
  • উদ্ধৃতিসূচক: ‘সারাক্ষণ ‘খাব খাব’ করে।’ ‘যাব যাব করছ, উঠছ না কেন?’ নৈকট্য বা সামীপ্য: সন্ধ্যা তখন হবে- হবে। লোকটা মরব-মরব করছে (এখানে উদ্ধৃতিসূচক অর্থও আছে)।
  • নিশ্চয়তা ও আশ্বাসসূচক: ‘খাব খাব! আমার সময় হলেই খাব।’ ‘যাবে যাবে! এত তাড়া কিসের?’ ক্রিয়ার অনুজ্ঞা রূপের দ্বিত্ব
  • তিরস্কারসূচক: যাঃ যাঃ! যাও যাও! যান যান। ভাগ ভাগ! পালা পালা! ছাড় ছাড়! ছাড়ো ছাড়ো! ছাড়ুন ছাড়ুন!
  • অনুরোধের তীব্রতা: শোন্ শোনু! শোনো শোনো! শুনুন শুনুন। চলো চলো। ওঠো ওঠো! বোস বোস! রাখ রাখ! পালাও পালাও! লেখো লেখা! পড়ো পড়ো!

লক্ষ্য করতে হবে যে, শুধু ইচ্ছাত্মক (volitional) ক্রিয়ার ক্ষেত্রেই এ অনুরোধের তীব্রতার অর্থটি আসে। যে ক্রিয়া ইচ্ছাত্মক নয় সেগুলোতে এ অনুরোধের সুরটা আসে না, কোথাও কোথাও অভিশাপের অর্থ জাগে। যেমন- মর্ মর্! পড় পড়!

  • নির্বন্ধ, উপদেশ; ‘দেখো দেখো, আমি যা বলছি তাই হবে।’ ‘যেয়ো যেয়ো।’ ‘খেয়ো খেয়ো! পেট ভরে খেয়ো।’
  • প্রত্যুক্তির স্পর্ধাসূচক: ‘কাটিস কাটিস! আমার কথা না ফলে তবে আমার দু কানই কেটে নিস।’ ‘ভেবো ভেবো! জেলখানায় বসে যত পার ভেবো।
  • অধৈর্যসূচক: যাস্ যাস্! যেয়ো যেয়ো! যাবেন যাবেন! খেয়ো খেয়ো! বোলো বোলো! বলিস, বলিস! লিখো লিখো! ঘুমোবেন ঘুমোবেন!এসব ক্রিয়ার মধ্যে ‘যদি’ অর্থে ‘তো’-ও এসে বসতে পারে। বিশেষত ভবিষ্যতের রূপে: ‘যাবেন তো যাবেন!’ ঘুমোবেন তো ঘুমোবেন!’
  • অন্যপক্ষের অনুজ্ঞা: ‘যাক্ যাক্, এ নিয়ে আর ভেবো না’, ‘থাক্ থাক্ আমার প্রণাম করতে হবে না।’ ‘হয় হোক হোক, এ নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে।’
অসমাপিকা ক্রিয়ারূপের দ্বিত্ব

অসমাপিকা ক্রিয়া: ইয়া এ বিভক্তিযুক্ত পূর্বক্রিয়া

এ (ইয়া): বলে বলে, খেয়ে খেয়ে, দেখে দেখে, হেঁটে হেঁটে, বসে বসে, ভুলে ভুলে, ভেবে ভেবে, লিখে লিখে, শুয়ে শুয়ে। যেসব ক্রিয়া একটানা চলে সেগুলোর ক্ষেত্রেই প্রলম্বন অর্থ প্রধান হয়- সারাদিন শুয়ে শুয়ে কাটালি। কিন্তু’ যে সব ক্রিয়া একবারবদ্ধ, সেগুলোর ক্ষেত্রে বারংবারতা বা পুনরাবৃত্তির অর্থটিই প্রধান- আছাড়া খেয়ে খেয়ে, পিটিয়ে পিটিয়ে, লাফিয়ে লাফিয়ে।

অসমাপিকা ক্রিয়া:-তে-অন্তক, নিমিত্তার্থক।

  • ক্রিয়াব্যক্তি: হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে, ভাবতে ভাবতে, শুনতে শুনতে, চলতে চলতে।
  • পুনরাবৃত্তিমূলক অর্থ: পেতে পেতে অভ্যেস হয়ে গেছে। শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে। দিতে দিতে ওর স্বভাব খারাপ করে দিয়েছিল।
  • ক্রিয়ার তাৎক্ষণিকতা ও অসমাপ্তি অর্থে: বলতে বলতে বাসটা ছেড়ে দিল। বসতে বসতে সভা শেষ। হাসতে হাসতে লোকটা হার্টফেল করল।
  • মাঝখানে ‘না’ পদাণুর (clitic) প্রয়োগ: বলতে না বলতে (ই), বসতে না বসতেই, লিখতে না লিখতেই (কাগজটা কেড়ে নিল), দাঁড়াতে না দাঁড়াতে (ই), ভাবতে না ভাবতে (ই)।
ক্রিয়াবিশেষণের দ্বিত্ব

ক্রিয়াবিশেষণের দ্বিত্ব সাধারণভাবে এককের অর্থটিকেই আরও স্পষ্টতা দেয় যেমন; আস্তে, কিন্তু আস্তে আস্তে, ধীরে, কিন্তু ধীরে ধীরে। জোরে কিন্তু জোরে জোরে। আবার বহুত্ব বা বারংবারতাও বেঝায়, যেমন- হঠাৎ হঠাৎ, কখন কখন, কখনো কখনো, বারে বারে, দিন দিন, রোজ রোজ, মাস মাস (মাসে মাসে), ঘণ্টায় ঘণ্টায়, সপ্তাহে সপ্তাহে, মুহূর্তে মুহূর্তে। ব্যাপ্তি অর্থে দিনে দিনে, রাতে রাতে, সকাল সকাল, সন্ধ্যায় সন্ধ্যায়।

আবেগ শব্দের দ্বিত্ব

আবেগ শব্দগুলোতে আভিধানিক শব্দ (যাঃ যাঃ, দূর দূর!) যেমন আছে তেমন আছে স্পষ্ট অর্থহীন কিন্তু ব্যঞ্জনাসিদ্ধ পদ, তেমন- দিক দিক! ছিঃ ছি! ছোঃ ছোঃ হ্যাট হ্যাট! ধ্যাত ধ্যাত! ভ্যাট ভ্যাট! ধুস ধুস!

পরামর্শ: ভাষার সব শব্দ তার ব্যাকরণ গঠন করতে হয় না। যে-কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারে কিছু শব্দ থাকে যা অখণ্ড বা অবিভাজ্য, অর্থাৎ যেগুলোর গঠনের ইতিহাস আমাদের কাছে মুছে গেছে, ফলে সেগুলো বর্তমান রূপেই ভাষায় প্রাপ্ত যেমন- হাত, পা, মাথা, ঘর, পথ, মানুষ, নদী, পেট, মুখ ইত্যাদি। এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় সরল (Simple) বা সিদ্ধ শব্দ।

আবার বহু শব্দের শরীরে তার গঠনের ইতিহাস চিহ্নিত থাকে, যেমন: ঢাকা + আই = ঢাকাই, ন্যাকা + আমি = ন্যাকাই, কুচুটে পনা = কুচুটেপনা, প্রতি উৎপদ + ত + মন্ + তি+ত্ব প্রত্যুৎন্নমতিত্ব, ধনুঃ + টং + কার = ধনুষ্টংকার। এ শব্দগুলোকে বলে Complex বা সাধিত শব্দ। এগুলোকে আরও ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে বোঝা যায় যে, সেই সব ক্ষুদ্র অংশগুলোর জুড়ে ও শব্দগুলোর প্রত্যেকটি গঠিত হয়েছে। ভাষায় মূলত সরল বা সিদ্ধ এবং জটিল বা সাধিত এ দুই ধরনের শব্দ থাকে। সব সাধিত শব্দের গঠনের প্রক্রিয়াটি স্পষ্ট নাও থাকতে পারে।

বাংলা শব্দভাণ্ডারে যত সাধিত শব্দ আছে তার সবকটির গঠন বাংলা ভাষাতে ঘটেনি। যেসব ভাষা থেকে আমরা শব্দ গ্রহণ করেছি (পরে শব্দভাণ্ডারের আলোচনা দেখুন) সেসব ভাষাতেই তার নিজস্ব ব্যাকরণে সেসব শব্দের অনেকগুলো গঠিত হয়েছে। যেমন: সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে ব্যুৎপন্ন হয়েছে ‘ব্যাকরণ’, ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’, ‘ঐশ্বরিক’ বা ‘পবর্তনাসুদেশ’, ‘পাণ্ডব’ বা ‘গ্রামান্তর’ জাতীয় শব্দ। তার অনেকগুলির গঠনের প্রক্রিয়া বাংলাভাষীর কাছে স্বচ্ছ বা স্পষ্ট নয় যে নিরক্ষর বাঙালি এর কিছু কিছু শব্দ মুখে ব্যবহার করেন) ‘ব্যাকরণ’, ‘নিরক্ষর’, ‘অলৌকিক’ ইত্যাদির ব্যুৎপত্তির বিবরণ তাঁর কাছে তো নেই-ই। শুধু সংস্কৃত থেকে নেওয়া শব্দাবলি নয়, ফরাসি ও আরবি থেকে আসা সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তি তার কাছে স্পষ্ট নয়, যেমন: স্পষ্ট নয় ইংরেজি বা পর্তুগিজ শব্দের ব্যুৎপত্তি। এমনকি বেশির ভাগ বাংলা সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তির ইতিহাসও বাঙালির কাছে স্পষ্ট নয়।

অনুশীলনমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: ১। শব্দ বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা শব্দ গঠিত হয় উদাহরণসহ লেখ। অথবা, শব্দ কাকে বলে? কী কী উপায়ে শব্দ গঠিত হয় উদাহরণসহ লেখ। অথবা, শব্দের সংজ্ঞা দাও। শব্দ গঠনের উপায়সমূহ উদাহরণসহ আলোচনা কর। অথবা, শব্দের সংজ্ঞা দাও। যেসব উপায়ে শব্দ গঠন করা যায় তা উদাহরণসহ বর্ণনা। [চ, বো,’১৭] [কু. বো, ‘০৮]

উত্তর: শব্দের সংজ্ঞা: এক বা তারও বেশি ধ্বনি বা বর্ণ মিলে যখন একটি অর্থ প্রকাশ পায় তখন তাকে শব্দ বলে। অর্থাৎ অর্থযুক্ত ধ্বনিকেই শব্দ বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: ড. মুহম্মদ এনামূল হকের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে অর্থবোধক হলে তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। শব্দ বলতে মানব কণ্ঠ নির্গত এবং এক বা একাধিক সার্থক (অর্থযুক্ত) ধ্বনিসমষ্টি বোঝায়।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোনো বিশেষ সমাজে নরনারীর কাছে যে ধ্বনির অর্থ স্পষ্ট আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নরনারীর ভাষার শব্দ।” এ অর্থে কেবল মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থপূর্ণ ধ্বনিই শব্দ।

ড. সুকুমার সেনের মতে, “অর্থবোধক একটি মাত্র বর্ণ অথবা কয়েকটি বর্ণের সমষ্টিকে শব্দ বা প্রাতিপদিক বলে।”

শব্দ গঠনের উপায়: তিন প্রকার শব্দ গঠন করা যায়। যেমন- ১. উপসর্গযোগে ২. প্রত্যয়যোগে ও ৩. সমাসের সাহায্য।

  • ১. উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগ করে নতুন অর্থবোধক।
    উদাহরণ: প্র + ভাত + প্রভাত (সংস্কৃত উপসর্গ)।
    অ + বেলা = অবেলা (খাঁটি বাংলা উপসর্গ)।
  • ২. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ করে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করা হয়।
    উদাহরণ: √ পড়ু + উয়া = পড়ুয়া (কৃৎ প্রত্যয়যোগে)।
    বাংলাদেশ + ঈ = বাংলাদেশী (ঈ প্রত্যয়যোগে)।
  • ৩. সমাসের সাহায্যে গঠিত শব্দ: সমাসের সাহায্যে প্রচুর বাংলা শব্দ গঠিত হয়েছে ও হচ্ছে।
    উদাহরণ: কাজলের মতো কালো = কাজলকালো।
    কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল।

প্রশ্ন ২। শব্দ বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর। [কু. বো. ১৫; ঢা. বো. ১৫,রা. বো. ১৭]

উত্তর: শব্দ হলো অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির নাম। অবশ্য ধ্বনির সমষ্টি হলেই তা শব্দ হয় না, তাকে একটি অর্থও প্রকাশ করতে হয়। যেমন: বল, কাগজ, কলম।

বিচিত্র উৎস থেকে নানা ধরনের শব্দ সংগৃহীত হয়ে বাংলা ভাষা শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন:

  • (১) উৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ (ক) তৎসম শব্দ-মন্তক, চন্দ্র গৃহ। (খ) অর্ধ-তৎসম-জোছনা, কেষ্ট, তেষ্টা। (গ) তদ্ভব শব্দ- জাতি, কান, মাথা, ভাত। (ঘ) দেশি শব্দ-সূর্য চুলা, ফুল। (ঙ) বিদেশি শব্দ-স্কুল, টেবিল চশমা।
  • (২) গঠনগত দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ: গঠন অনুসারে শব্দসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (ক) মৌলিক শব্দ-মাথা, হাত, জাপান। (খ) সাধিত শব্দ-জাহাজ-ই-জাহাজি, পড় + অন্ত = পড়ন্ত, পঙ্কে জন্মে যা= পঙ্কজ।
  • (৩) অর্থমূলক দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ: (ক) যৌগিক শব্দ – চল্ + অন্ত চলন্ত, ঢাকা + আই = ঢাকাই। (খ) রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ-সন্দেশ, বাঁশি। (গ) যোগরূঢ় শব্দ-রাজপুত, মহাযাত্রা।

প্রশ্ন: ৩। উৎস বা উৎপত্তির বিচারে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [ব. বো. ০৯; কু. বো.১০]

অথবা, উৎপত্তি (ব্যুৎপত্তি) অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

অথবা, উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর। [সি. বো. ‘০৯]

অথবা, উৎপত্তিগত বিচারে/দিক থেকে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদহারণসহ লেখ। [ঢা. বো. ‘০৩, ‘০৯, ‘১২; ব. বো. ‘০৬; য. বো. ‘০৭; রা. বো. ‘০৭]

অথবা, উৎপত্তির বিচারে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণ লেখ। [য. বো. ‘০৫]

অথবা, উৎপত্তিগত দিক থেকে/উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগগুলো উদাহরণসহ আলোচনা কর। [দি. ‘১০; রা. ‘১২]

উত্তর: উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দের প্রকারভেদ: উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগ ভাগ করা হয়েছে। যেমন-১. তৎসম শব্দ, ২. তদ্ভব শব্দ, ৩. অর্ধ-তৎসম শব্দ, ৪. দেশি শব্দ ও ৫. বিদেশি শব্দ। নিম্নে উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

  • ১. তৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অবিকৃতভাবে বাংলা ভাষায় মিলিত হয়েছে সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে।
    উদাহরণ: চন্দ্র, সূর্য, হস্ত, মস্তক, ধর্ম, নক্ষত্র, ভবন, মনুষ্য ইত্যাদি।
  • ২. তদ্ভব শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায় কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে সেসব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে।
    উদাহরণ: সংস্কৃত হস্ত, প্রাকৃত হথ, তদ্ভব হাত। সংস্কৃত – চর্মকার, প্রাকৃত চম্মকার, তত্ত্বব চামার ইত্যাদি।
  • ৩. অর্ধ-তৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কিঞ্চিৎ বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে সেসব শব্দকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। উদাহরণ: গৃহিণী > গিন্নী, জ্যোৎস্না > জোছনা ইত্যাদি।
  • ৪. দেশি শব্দ: যেসব শব্দ আদিকাল থেকে এ দেশের কোল, দ্রাবিড় ও অনার্য ভাষা হতে এসেছে অথবা যাদের মূল অজ্ঞাত অথচ বাংলা ভাষায় প্রচলিত সেগুলোকে দেশি শব্দ বলে। উদাহরণ: চুলা, গোলা, চটি, বাখারি, খোড়, আড্ডা, ঝানু, ঝঞ্ঝা, ঝড়, ঝাঁপ, ঝোপ, ঢেঁকি, ডিঙি, ডাহা।
  • ৫. বিদেশি শব্দ: বাণিজ্যিক, ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কারণে প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশিরা এদেশে এসেছে। এসব বিদেশিদের ব্যবহৃত যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে যেসব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে।

ক. আরবি শব্দ: বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-

  • ১. ধর্মসংক্রান্ত শব্দ: আল্লাহ, ইসলাম, অযু, কোরবানি, কুরআন, গোসল, কেয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম, তসবি, তওবা, হজ, যাকাত, হারাম, হালাল, হাসিদ, মাদ্রাসা, মুসলিম, মিনার, মিযান, মসিজদ, সিরাত, হাশর, দুনিয়া, দোয়া, জিহাদ, কাফির, নফর, হুর, নূর, রাসূল, কবর, মালউন, তসবিহ, দজ্জাল, আরশ, আমানত, ইবাদত, ইমান ও কিসাস প্রভৃতি।
  • ২. প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: আবির, আমল, আমলা, আমানত, আমিন, আমির, আয়েশ, আরক, আরশ।

খ. ফারসি শব্দ: আইন, আওয়াজ, আঙুর, আচার, আজাদ, আতশবাজি, আদমশুমারি, আন্দাজ, আফসোস, আবাদ।

আরবি-ফারসির মিশ্রণ: মজুমদার, মহাফেজখানা, ওয়াকিবহাল, ওরফে, বয়নামা, বরকন্দাজ, বায়ানানামা, বালাই।

ফারসি-আরবির মিশ্রণ: খোশমেজাজ, খুবসুরত, খোদাতায়ালা, নাবালক, নারাজ, নাহক, নিমক- হারাম, নেক-নজর।

ইংরেজি শব্দ: অফিস, আর্ট, ইঞ্জিন, এনামেল, এজেন্ট, কনস্টেবল, কফি, করগেট, ক্যাপ্টেন, কার্নিস, কলেজ, কেটলি।

পর্তুগিজ শব্দ: আতা, আলমারি, আলপিন, আলকাতরা, ইসপাত, এনতার, কপি, ক্রুশ, কামিজ, কামরা, কেদারা।

ফরাসি শব্দ: আঁশ, ইংরেজ, বুর্জোয়া, রেস্তরাঁ, শেমিজ, কুপন, কার্তুজ, ক্যাফে, ওলন্দাজ, বিস্কুট ইত্যাদি। €

তুর্কি শব্দ: উজবুক, কাঁচি, কাবু, বিবি, কুলি, কোর্মা, খাতুন, চাকু, বোঁচকা, আলখাল্লা, বেগম, লাশ ইত্যাদি।

ওলন্দাজ শব্দ: ইসক্রুপ, তুরূপ, টেক্কা, ইস্কাপন, হরতন, রুইতন ইত্যাদি।

চীনা শব্দ: লিচু, টাইফুন, চা, চিনি, এলাচি, হোয়াংহো ইত্যাদি।

জাপানি শব্দ: প্যাগোডা, নিপ্পন, হাস্নাহেনা, রিকশা, হারিকিরি, টোকিও ইত্যাদি।

বার্মিজ শব্দ: লুঙ্গি, ফুঙ্গি, ঘুঘনি, কিয়াং, মিয়ানমার, আরাকান, ইয়াঙ্গুন ইত্যাদি।

রুশ শব্দ: বলশোভিক, মস্কতা, সোভিয়েত, স্পুটনিক ইত্যাদি।

গ্রিক পথ: দার্থাম (Durkham) > দাম, গোনোস (Gonos)> কোণ, কেল্টর (Centor) > কেন্দু ইত্যাদি।

• প্রধানত ইংরেজি ভাষা থেকে আগত অন্যান্য ভাষার শব্দ।

অস্ট্রেলিয়া– ক্যাঙ্গারু; জার্মানি-ফ্যুরার; তিব্বতী-লামা; দক্ষিণ আফ্রিকা-জেব্রা। পেরু-কুইনাইন;

মালয়-কালাতুয়া, গুদাম, কিরিচ, সাগু, সিংহল-বেরিবেরি।

আরবি-চীনার মিশ্রণ – কাবাব-চিনি।

তুর্কি-ফারসির মিশ্রণ – চুগলিখোর, মোগলাই।

আরবি-তুর্কির মিশ্রণ – খাজাঞ্চি।

মিসরীয় শব্দ: মিসরি > মিছরি।

প্রশ্ন: ৪। অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ লেখ/বর্ণনা/আলোচনা কর। [সি, বো. ‘০৫, ‘০৭, ‘১২: ব. বো, ‘৩৩, ০৭: রা, বো, ‘০৮, ‘১৫; দি. য. ‘১১]

অথবা, অর্থ অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়। উদাহরণসহ বিবরণ দাও। [ব. বো. ‘০৫]

অথবা, অর্থের পার্থক্যের বিচারে বাংলা ভাষা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী। উদাহরণসহ আলোচনা কর। [য. ‘০৬; চ. ‘১১]

অথবা, অর্থ অনুযায়ী শব্দের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর। [কু, বো, ‘০৫; রা. বো, ‘১১)

অথবা, অর্থ অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর। [কু. বো. “‘১২]

অথবা, অর্থ বিচারে শব্দ কয় প্রকার ও কী কী। বর্ণনা কর। [র. বো. ‘১২]

অথবা, অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ লেখ। [ব. বো. ‘০৭]

অথবা, অর্থগত দিক থেকে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [য. বো. ‘০৩]

অথবা, অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী। উদাহরণসহ আলোচনা কর। [সি. বো, ‘১০। দি, বো, ‘১৫]

উত্তর: অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দের প্রকারভেদ অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে তিন ভাগে ভাগ বিভক্ত করা যায়। যেমন- ১. যৌগিক শব্দ, ২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ও ৩. যোগরূঢ় শব্দ।

১. যৌগিক শব্দ: যেসব শব্দের অর্থ তাদের প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থানুযায়ী হয়ে থাকে, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে।
উদাহরণ: √কৃ + তব্য = কর্তব্য – অর্থ: যা করা উচিত।

চিকা + মারা = চিকামারা – অর্থ দেওয়ালের লিখন।

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ: যেসব শব্দ প্রকৃতি ও প্রত্যয় অনুসারে অর্থ প্রকাশ না করে, অন্য কোন অর্থ প্রকাশ করে সেগুলোকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে।
উদাহরণ: জ্যাঠামি = জ্যাঠা + আমি (মূল অর্থ জেঠার মতো না বুঝিয়ে পাকামি বা চপলতা বোঝানো হয়েছে)। বাঁশি = বাঁশ + (মূল অর্থ বাঁশের তৈরি না বুঝিয়ে বাদ্যযন্ত্র বোঝানো হয়েছে)।

৩. যোগরূঢ় শব্দ: যেসব প্রকৃতি প্রত্যয়ের অর্থকে সংকুচিত করে এক বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। একমাত্র পদ্ম ফুলকে বোঝায়)।
উদাহরণ: পক্ষে জন্মে যা = পঙ্কজ (বিশেষ অর্থে জল ধারণ করে যে = জলধি (বিশেষ অর্থে সমুদ্রকে বোঝায়)।

প্রশ্ন: ৫। শব্দের সংজ্ঞা দাও। গঠন অনুসারে বাংলা শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা, শব্দ কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ প্রথাও আলোচনা কর।

অথবা, শব্দের গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ কর এবং প্রত্যেক প্রকার শব্দের উদাহরণ দাও।

অথবা, শব্দ কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাংলা শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [ঢা. বো. ‘১৫]

উত্তর: শব্দের সংজ্ঞা: এক বা তারও বেশি ধ্বনি বা বর্ণ মিলে যখন একটি অর্থ প্রকাশ পায় তখন তাকে শব্দ বলে। অর্থাৎ অর্থযুক্ত ধ্বনিকেই শব্দ বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: ড. মুহম্মদ এনামূল হকের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে অর্থবোধক হলে তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। শব্দ বলতে মানব কণ্ঠ নির্গত এক বা একাধিক সার্থক (অর্থযুক্ত) ধ্বনিসমষ্টি বুঝায়।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “কোনো বিশেষ সমাজে নরনারীর কাছে যে ধ্বনির অর্থ স্পষ্ট আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে সেই সমাজের নরনারীর ভাষার শব্দ। এ অর্থে কেবল মানুষের মুখনিঃসৃত অর্থপূর্ণ ধ্বনিই শব্দ।”

ড. সুকুমার সেনের মতে, “অর্থবোধক একটি মাত্র বর্ণ অথবা কয়েকটি বর্ণের সমষ্টিকে শব্দ বা প্রাতিপদিক বলে।”

গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দের শ্রেণিবিভাগ: গঠন অনুসারে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সব শব্দকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ ও ২. সাধিত শব্দ।

১. মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দ: যেসব বাংলা শব্দকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না এবং যার সঙ্গে কোনো প্রত্যয়, বিভক্তি বা উপসর্গ যুক্ত থাকে না তাকে মৌলিক বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দ বলে। উদাহরণ: গোলাপ, বই, আকাশ, লাল, বাবা, মা, হাত, তিন ইত্যাদি।

২. সাধিত শব্দ: যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় এবং বিশ্লেষণে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায় তাকে সাধিত শব্দ বলে। উদাহরণ: রাখাল + রাজা রাখালরাজা। দোকান দার দোকানদার।
মোগল+ আই = মোগলাই। প্রশাসন = প্রশাসন ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ৬। শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠন প্রক্রিয়াগুলো আলোচনা কর। [সি. ‘০৬; কু. বো. ‘১৫]

অথবা, বাংলা ভাষা কী কী উপায়ে শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ। [চ. বো. ‘১২; ‘১৫]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? শব্দ গঠনের উপায়গুলো উদাহরণসহ আলোচনা কর। [দি. বো. ‘০৯]

অথবা, শব্দ গঠন কী? বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের নিয়মগুলো লেখ। [ব. বো. ‘১১]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ/আলোচনা কর। [ঢা, বো. ‘১১]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? বাংলা শব্দ গঠনের উপায়সমূহ কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [সি. বো. ‘০১; ঢা. বো, ‘০৮; দি. বো, ‘১২]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী উপায়ে বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও। [য. বো. ‘০৪; সি. বো. ১১]

অথবা, কী কী উপায়ে বাংলা ভায়া শব্দ গঠন করা যায়। উদাহরণসহ আলোচনা কর। [রা, বো, ‘০৪, ০৬]

অথবা, শব্দ গঠন কাকে বলে? কী কী উপায়ে শব্দ গঠিত হয়- আলোচনা কর। [কু. বো. ১১]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? কী কী পদ্ধতিতে/উপায় শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ। [য. বো. ‘০২, ‘১২; ঢা. বো. ‘০৪, ‘০৬; সি. ব. বো. ০৮]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠনের তিনটি নিয়ম উল্লেখ কর। [ঢা. বো, ‘০২]

অথবা, শব্দ গঠন বলতে কী বোঝ? সার্থক শব্দ গঠনের উপায়গুলো উদাহরণসহ লেখ। [কু. যো, ‘০৩, ০৬০৪. বো, ০৬]

অথবা, কী কী উপায়ে বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ লেখ। (চ.’০৩; ব. ‘০৪: সি. ‘১৫: য. ‘১০]

অথবা, কী কী উপায়ে বাংলা শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [চ. ‘০৮; দি. বো, ‘০৯]

উত্তর: শব্দ গঠন রীতির সংজ্ঞা: বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডার বিভিন্ন ভাষার শব্দ সমন্বয়ে গড়ে ওঠেছে। প্রতিটি ভাষারই মূল শব্দ খুব বেশি থাকে না। বাংলা ভাষারও মূল শব্দ সাধিত শব্দের তুলনায় অনেক কম। কেবল মূল শব্দের আশ্রয়ে ভাষার সমৃদ্ধি ও প্রবহমানতা সম্ভব নয়। তাই নতুন শব্দ তৈরি হয়। নতুন শব্দ তৈরির নিয়ম ও রীতি আছে। মূল শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় ও উপসর্গ ইত্যাদি যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা হয়। আবার সন্ধি ও সমাস দ্বারাও নতুন শব্দ তৈরি হয়।

উদাহরণ: উপসর্গযোগে: সুনাম সুনাম। প্র + হার = প্রহার।
প্রত্যয়যোগে: মোগল+ আই = মোগলাই। ঢাকা + আই = ঢাকাই।
সমাসযোগে: তিন ভূবনের সমাহার ত্রিভুবন। সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন।

• শব্দ গঠিত হওয়ায় উপায়: তিন প্রকারে শব্দ গঠন করা যায়।

যেমন- ১. উপসর্গযোগে, ২. প্রত্যয়যোগে ও ৩. সমাসের সাহায্যে।

  • ১. উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়।
    উদাহরণ: প্র + ভাত = প্রভাত (সংস্কৃত উপসর্গ)।
    অ + বেলা = অবেলা (খাঁটি বাংলা উপসর্গ)।
  • ২. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: পড় + উড়া = পড়ুয়া (কৃৎ প্রত্যয়যোগে)। বাংলাদেশ + ঈ = বাংলাদেশী (ঈ প্রত্যয়যোগে)।
  • ৩. সমাসের সাহায্যে গঠিত শব্দ: সমাসের সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়। উদাহরণ: কাজলের মতো কালো কাজলকালো।
    কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল।

প্রশ্ন: ৭। গঠন অনুযায়ী বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যয় ও উপসর্গযোগে শব্দ কীভাবে গঠিত হয়? উদাহরণসহ আলোচনা কর। [কু. বো. ‘০৪; য. বো. ‘০৯]

অথবা, গঠনানুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ কয় ভাগে বিভক্ত হতে পারে? উদাহরণসহ লেখ। (চ. বো. ‘১০]

অথবা, গঠন অনুযায়ী বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ লেখ। [বি. বো. ‘১০]

অথবা, প্রত্যয়যোগে ও উপসর্গযোগে কীভাবে শব্দ গঠিত হয়? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও। [ঢা. বো, ‘০১]

উত্তর: গঠন অনুযায়ী বাংলা শব্দের প্রকারভেদ: গঠন অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দসমূহ দু ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: ১. মৌলিক শব্দ ও ২. সাধিত শব্দ।

প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন: প্রত্যয় নতুন শব্দ গঠন করার একটি কৌশল। প্রত্যয়যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয় তার উৎস দু’ধরনের- একটি ধাতুর আর অপরটি শব্দ। কখনো ধাতুর সঙ্গে কখনো শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় যোগ করে যেসব শব্দ গঠন করা হয় সেসব শব্দ বিশ্লেষণ করলে মূল উৎস হিসেবে কখনো ধাতু আবার কখনো শব্দ পাওয়া যায়। শব্দের এ মূল রূপের নাম প্রকৃতি। আর প্রকৃতির সঙ্গে যে শব্দ অথবা শব্দাংশ মিলিত হয়ে বিভক্তিহীন নতুন শব্দ গঠন করে তাই প্রত্যয়। প্রত্যয়ের সাহায্যে গঠিত শব্দকে প্রত্যায়ান্ত শব্দ বলে।

উদাহরণ: দিন + ইক প্রত্যয়ান্ত শব্দ ‘দৈনিক’।
√পঠ + অক = প্রত্যয়ান্ত শব্দ ‘পাঠক’।

উপসর্গযোগে শব্দ গঠন: উপসর্গ পৃথক কোনো অর্থ প্রকাশ করতে পারে না, এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। তারপরও এরা নতুন শব্দ গঠন করে এবং নতুন নতুন অর্থ নির্দেশ করে। ধাতুর আগে বসে এরা ধাতু নিষ্পন্ন শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ, সংকোচন বা পরিবর্তন সাধন করে। যেমন: হৃ একটি ধাতু, হার হচ্ছে হৃ ধাতু নিষ্পন্ন একটি শব্দ। এই ‘হার’ শব্দের পূর্বে অব্যয়সূচক শব্দ ‘আ’ বর্ণটি বসলে গঠিত হয় নতুন শব্দ ‘আহার’। এরূপে প্র+হার= প্রহার; বি+হার= বিহার। আবার একই ধাতুর আগে একের অধিক উপসর্গ মিলিত হতে পারে।

উদাহরণ: তন্‌ + √দ্রা + আলু = তন্দ্রালু। নি + √দ্রা = আলু + নিদ্রালু ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ৮. কমপক্ষে দুটি করে উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠনের পাঁচটি পদ্ধতি লেখ। [ঢা. বো. ০১]

  • উত্তর: উদাহরণসহ বাংলা শব্দ গঠনের পাঁচটি পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-
    ১. বিভক্তিযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের পর বিভক্তি যোগ হলে তা পদে পরিণত হয়। তাছাড়া বচন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। এতে নতুন অর্থ প্রকাশ পায়।
    উদাহরণ: চীন + আ = চীনা। √চল + অন্ত চলন্ত।
  • ২. প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ: শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যোগ হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: √ পড় + উয়া = পড়ুয়া (কৃৎ প্রত্যয়যোগে)
    বাংলাদেশ + ঈ = বাংলাদেশী (ঈ প্রত্যয়যোগে)।
  • ৩. উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ: শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়।
    উদাহরণ: প্র + ভাত = প্রভাত (সংস্কৃত উপসর্গ)। অ + বেলা = অবেলা (খাঁটি বাংলা উপসর্গ)।
  • ৪. সন্ধির সাহায্যে গঠিত শব্দ: সন্ধির সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা।
  • ৫. সমাসের সাহায্যে গঠিত শব্দ: সমাসের সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়।
    উদাহরণ: কাজলের মতো কালো কাজলকালো।
    কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল।

প্রশ্ন: ৯। দ্বিরুক্তি শব্দ কাকে বলে? দ্বিরুক্তি শব্দ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

উত্তর: দ্বিরুক্তি শব্দের সংজ্ঞা: দ্বিরুক্তি শব্দের অর্থ দু’বার বলা। বাংলা ভাষায় কোনো কোনো শব্দ, পদ বা অনুকার শব্দ নিজে নিজে যে অর্থ প্রকাশ করে সেগুলো দু’বার ব্যবহার করলে অন্য কোনো সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে। একই শব্দের এরূপ প্রয়োগকেই দ্বিরুক্তি শব্দ বলে। যেমন: আমার জ্বর হয়েছে। এখানে ‘জ্বর’ শব্দটি সাধারণ জ্বর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আমার জ্বর জ্বর লাগছে বললে ‘জ্বর জ্বর’ শব্দটি ঠিক জ্বর নয় জ্বরের ভাব প্রকাশ করে।

দ্বিরুক্তি শব্দের প্রকারভেদ: দ্বিরুক্তি শব্দকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. খাঁটি দ্বিরুক্তি শব্দ ও ২. অনুচর দ্বিরুক্তি শব্দ। নিচে প্রত্যেক প্রকার দ্বিরুক্তি শব্দের সংজ্ঞাসহ উদাহরণ দেয়া হলো:

  • ১. খাঁটি দ্বিরুক্তি শব্দ: একই অপরিবর্তিত অবস্থায় পর পর দু’বার বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হলে তাকে খাঁটি দ্বিরুক্তি শব্দ বলে। উদাহরণ: তার টানা টানা চোখ মন কেড়ে নেয়।
    ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরে ঝরে পড়ছে।
  • ২. অনুচর দ্বিরুক্তি শব্দ: যেসব দ্বিরুক্তি শব্দে প্রথম শব্দের সঙ্গে মিল রেখে পরবর্তী শব্দ বসে তাকে অনুচর দ্বিরুক্তি শব্দ বলে। উদাহরণ: বেয়াই, আমার মেয়েটাকে দেখেশুনে রাখবেন। সাবধানে থেকো, তোমার আশপাশের মানুষগুলো ভালো না।
]]>
https://bpbangla.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%a6-%e0%a6%97%e0%a6%a0%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82/feed/ 0